নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে কিছুটা কমেছে। তবে দৈনিক গড় লেনদেন ১৬ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূচক ও লেনদেন কমেছে।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারে জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্যাপিটাল গেইন করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করেন। ৫০ লাখ টাকার বেশি ক্যাপিটাল গেইন হলে তার ওপর ১৫ শতাংশ কর ধার্য করা হয়। অর্থাৎ কোনো বিনিয়োগকারী ৬০ লাখ টাকা ক্যাপিটাল গেইন করলে, সেই ক্যাপিটাল গেইনের ৫০ লাখ টাকা করমুক্ত থাকবে। বাকি ১০ লাখ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। তবে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের দিন সূচক ও লেনদেন উভয় বাড়ে।
পুঁজিবাজারের সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে পর্যালোচনায় দেখা যায়, সর্বশেষ গত মাসের প্রথম সপ্তাহে ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ও লেনদেন ইতিবাচক ধারায় ছিল। পরের তিন সপ্তাহ বাজার নিম্নমুখী ছিল। এরপর গত সপ্তাহে ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় দশমিক ৩ শতাংশ কমে। এতে পয়েন্ট ৫ হাজার ২৩৭ হয়, যা আগের সপ্তাহ শেষে ছিল ৫ হাজার ২৫২ পয়েন্টে। গত সপ্তাহে ডিএস-৩০ সূচক সপ্তাহের ব্যবধানে দশমিক ৯ শতাংশ কমে ১ হাজার ৮৫৮ পয়েন্ট হয়েছে। এর আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ৮৭৫ পয়েন্ট। এছাড়া শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৩৭ পয়েন্ট হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১ হাজার ১৪৪ পয়েন্ট।
প্রধান পুঁজিবাজারে আলোচ্য সপ্তাহে লেনদেন হয় ৪১২টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৭টির, কমেছে ২০৪টির এবং পরিবর্তন হয়নি ২২টি বাজারদর। এছাড়া লেনদেন হয়নি ১৯টির। গত সপ্তাহে সূচকের উত্থানে বড় অবদান রাখে ফরচুন সুজ, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের শেয়ার।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৪৫২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। এর আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৯০ কোটি টাকা। সে হিসাবে দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ সময়ে ডিএসইতে মোট ২ হাজার ২৫৮ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা।
খাতভিত্তিক লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের। ১২ দশমিক ৪ শতাংশ লেনদেন হয়েছে বস্ত্র খাতের, যা তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ৯ শতাংশ ছিল চতুর্থ অবস্থানে থাকা প্রকৌশল খাতের। ব্যাংক খাতের দখলে ছিল লেনদেনের ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
ডিএসইতে আলোচ্য সপ্তাহে ইতিবাচক রিটার্নে শীর্ষে ছিল চামড়া, জীবন বীমা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতÑএই তিন খাতে রিটার্ন এসেছে যথাক্রমে ৪ দশমিক ৫, ৩ দশমিক ৭ এবং ১ দশমিক ৪ শতাংশ। নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে প্রকৌশল, মিউচুয়াল ফান্ড ও বিবিধ খাতে। আলোচ্য তিন খাতে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে যথাক্রমে ৩ দশমিক ১, ৪ ও ১ দশমিক ৬ শতাংশ।
ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে ৩৯৩ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। সূত্র মতে, সমাপ্ত সপ্তাহে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ২৪ কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তাতে লেনদেনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি। আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ অবদান প্রতিষ্ঠানটির। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিচ হ্যাচারির সপ্তাহজুড়ে গড়ে ১৪ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে আসা বিএটিবিসির বিদায়ী সপ্তাহে গড়ে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হাজার টাকার। সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে রয়েছেÑমেঘনা পেট্রোলিয়াম, লাভেলো আইসক্রিম, স্কয়ার ফার্মা, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ফরচুন সুজ এবং ইজেনারেশন।
বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যাল। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সমাপ্ত সপ্তাহে সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ারের দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় ২১ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির সমাপনী মূল্য দাঁড়িয়েছে ২০ টাকা ১০ পয়সায়। দরবৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ফরচুন সুজের শেয়ারদর বেড়েছে ২০ দশমিক ২১ শতাংশ। ১৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ শেয়ারদর বাড়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান করেছে এমারাল্ড অয়েল। সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑনূরানী ডাইং, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, তুং হাই নিটিং, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক এবং আফতাব অটোমোবাইলস।
বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের শীর্ষে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ। সূত্র মতে, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ারের দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমেছে। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির সমাপনী মূল্য ছিল ১৪০ টাকা ৬০ পয়সা। দরপতনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা হামি ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। শেয়ারের দাম ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ কমায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি। দরপতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে রয়েছেÑওরিয়ন ইফিউশন, রহিম টেক্সটাইল, এনসিসি ব্যাংক, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবলি মিউচুয়াল ফান্ড, আইবিবিএল মুদারাবা পারপেচুয়াল বন্ড এবং ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স।
অন্যদিকে, গত সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই দশমিক ৮৩ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৯৬৭ পয়েন্টে পৌঁছেছে। সিএসসিএক্স সূচকটি সপ্তাহ শেষে শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৯৮৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সিএসইতে গত সপ্তাহে ৪৩৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ২৬৬ কোটি টাকা। গত সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩১৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৬টির, কমেছে ১৬০টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৯টির।