Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:49 pm

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে দীর্ঘসূত্রতা দায় কার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা অন্য কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য  যখন  অর্থ সংগ্রহের প্রয়োজন হয়, তখনই একটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসে। কিন্তু আবেদন করার পর আইপিও’র চূডান্ত অনুমোদন পর্যন্ত মোটামুটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। আর এটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ সময়  ঝুলে থাকে কোম্পানিটি। পরে তালিকাভুক্তির অনুমোদন মিললেও তাতে পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে পারে না কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। কারণ দীর্ঘ সময় ব্যয় হওয়ার কারণে অনেক সময় তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এ দীর্ঘসূত্রতার জন্য কোম্পানিগুলো সাধারণভাবে বিএসইসিকে দায়ী করে থাকে। অন্যদিকে বিএসইসি’র ভাষ্য হচ্ছেÑ তারা কোনো কারণেই অযথা সময় নষ্ট করে না। কোম্পানিগুলো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিক সময়ে দাখিল করে না বলেই এ কালক্ষেপণ।

জানা যায়, রোড শো শেষ হওয়ার প্রায় এক বছর পরেও বিডিংয়ের মাধ্যমে শেয়ার বিক্রির অনুমোদন পায়নি পুঁজিবাজারে আসার অপেক্ষায় থাকা কয়েকটি কোম্পানি। এছাড়া আরও ছয়টি কোম্পানি নিলামের অনুমোদনের জন্য ছয় মাস ধরে অপেক্ষায় আছে। দীর্ঘ সময় ধরে কোনো সিদ্ধান্ত জানতে না পারায় ব্যবসা সম্প্রসারণ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে যেতে পারছে না কোম্পানিগুলো।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এই দীর্ঘসূত্রতা কোম্পানির পুঁজিবাজারে আসাকে নিরুৎসাহিত করবে। মূলধন সংগ্রহে অতিরিক্ত বিলম্ব হলে ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা উপযোগিতা হারাতে পারে।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘একটি কোম্পানি মূলধন সংগ্রহের আবেদন করার আগে এ অর্থ দিয়ে কি করবে তার একটি পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর এ অর্থ পেলে তা দিয়ে বেশিরভাগ সময়ই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। বিএসইসি’র এদিকে নজর রাখা উচিত।’

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রাহমান বলেন, ‘আমরা সবকিছু নিয়ম মেনেই করছি। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বা ইস্যু ম্যানেজাররা প্রায় যথাসময়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে ব্যর্থ হয়। যে কারণে কালক্ষেপণ হয়।’

জানা যায়, প্রতিবেশী দেশ ভারতে স্বল্প সময়েই একটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে পারে। দেশটির পুঁজিবাজারে কোনো একটি কোম্পানি তালিকাভুক্তির আবেদন করলে ২১ দিনের মধ্যে তাদের কোনো সমস্যা থাকলে তা জানিয়ে দেওয়া হয়। পুঁজিবাজারে আসার অনুমতি মিললে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে  ছয় মাসের মধ্যে রোড শো করতে হয়। চাইলে একটি কোম্পানি এক মাসের মধ্যেই বিডিং করতে পারে। পাঁচ দিন বিডিং চলার পর ১২ দিনের মধ্যেই কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। কারণ বিডিংয়ের সময়ই সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ অন্য বিনিয়োগকারীরা তাদের কোটায় আবেদন করার সুযোগ পান।

অন্যদিকে রোড শো করার জন্য ভারতে তেমন খরচ নেই বললেই চলে। কারণ কোম্পানিগুলো বিডারদের সঙ্গে পৃথকভাবে যোগাযোগ করে। এর বিপরীতে বাংলাদেশে কোম্পানিগুলো রোড-শো বাবদ অনেক অর্থ ব্যয় করে। কোম্পানিভেদে এর পরিমাণ দুই থেকে তিন কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিষ্ঠানগুলোর এরূপ আড়ম্বর করে রোড শো করার কোনো অর্থ নেই। কারণ এ টাকাগুলো ব্যয় আইপিও বাবদ। অর্থাৎ এ অর্থের জোগানদাতা বিনিয়োগকারী। সুতরাং অকারণে এ অর্থ ব্যয় করার কোনো মানে নেই।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে বুকবিল্ডিং পদ্ধতির আইপিও আইন সংশোধনের পর গত বছর ১১টি কোম্পানি বাজারে শেয়ার ছাড়ার উদ্দেশে রোড-শোর আয়োজন করেছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে এসটিএস হোল্ডিংস (অ্যাপোলো হাসপাতাল)  গত বছরের ৫ এপ্রিল আমরা নেটওয়ার্কসের ১২ এপ্রিল, ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের রোড শো ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া আমান কটনের ২৫ এপ্রিল, বসুন্ধরা পেপার মিলসের ৩০ জুন, ডেল্টা হসপিটালের ৬ অক্টোবর, বেঙ্গল পলি অ্যান্ড পেপার স্যাকের ৯ অক্টোবর, রানার অটোমোবাইলসের ১৯ অক্টোবর, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের ২৪ অক্টোবর এবং ১৮ অক্টোবর ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের রোড-শো অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে শুধু আমরা নেটওয়ার্কসের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।