Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:17 pm

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পদ্ধতি সহজ করতে হবে

পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানিগুলো কেন অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না? এখানে মূল সমস্যা বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসতে একটি কোম্পানির প্রায় দেড় বছর সময় লাগে। আর ব্যাংক থেকে টাকা নিলে মাত্র এক মাস সময় লাগে। যেখানে এক মাস সময়ের মধ্যে কাজ হয়, সেখানে কেন দেড় বছর অপেক্ষা করতে হবে এবং কোম্পানিকে ঝুঁকির মধ্যে রাখবে? বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিবেচনায় আনা উচিত। যদি সময় কমানো না যায়, সেক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা যতই নিয়মনীতি পরিবর্তন করুক, কোনো লাভ হবে না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
মোশতাক সাদেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মাহমুদ হোসেন, এফসিএ এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও ফাহমিদা হক। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন হাসিব হাসান।
মাহমুদ হোসেন বলেন, পুঁজিবাজার স্বাভাবিক অবস্থা ধরে রাখতে পারছে না। পুঁজিবাজারে ওঠানামার গতি অস্থিতিশীল, অর্থাৎ একদিন বাড়লে দুদিন কমে। আবার ক্রমাগত কমতেই থাকে। পুঁজিবাজারের আচরণ এরকম হওয়া উচিত নয়। বাজারের গতিবিধি নির্ভর করে বিনিয়োগকারীদের ওপর। একটি হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারী, অপরটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। এখন কথা হচ্ছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী অর্থাৎ যাদের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে পুঁজিবাজারের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণের জন্য। বিশেষ করে আইসিবির আচরণ সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। আবার মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো অর্থাৎ যাদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করার কথা, তারা সেটি না করে ডে ট্রেডিংয়ে ঝুঁকছে। তাদের যে ভূমিকা রয়েছে, সেটি সঠিকভাবে পালন করছে না। এটি আসলে কাম্য নয়। ২০১৭ সালে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে, সে পরিমাণ বাড়েনি। তবে গত কয়েক মাসে বিদেশি বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। বাজার টেকসই ও বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে হলে যে নিয়মগুলো রয়েছে, সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। আবার বিগত বছরে যেসব কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেখানে কটি মৌলভিত্তির কোম্পানি এসেছে সেটাও দেখতে হবে। বেশিরভাগ আসছে স্বল্প মূলধনি কোম্পানি। যাদের উদ্যোক্তা পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করে সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ না করে মালয়েশিয়া বা ইউরোপের প্রভৃতি দেশে বাড়ি-গাড়ি কিনেছে। এসব নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কি ভূমিকা পালন করছে? এসব অনিয়মে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে এবং সঠিক জায়গায় সঠিক ব্যক্তিকে বসাতে হবে। যদি সেটি সম্ভব না হয়, তাহলে পুঁজিবাজারে ভালো কিছু আশা করা অযৌক্তিক।
তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক; কিন্তু পুঁজিবাজারের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। কারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে তার কিছুটা প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ে। কথা হচ্ছে, পুঁজিবাজার নিয়ে যে আশাবাদী হব  সে অবস্থা নেই। আসলে পুঁজিবাজার কয়েকজনের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ঠিক যেন দাবা খেলার মতো।
পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানিগুলো অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না কেন? এখানে মূল সমস্যা হচ্ছে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসতে প্রায় দেড় বছর লাগে। আর ব্যাংক থেকে টাকা নিলে লাগে মাত্র এক মাস। যেখানে এক মাস সময়ের মধ্যে কাজ হয়, সেখানে কেন দেড় বছর অপেক্ষা করতে হবে এবং কোম্পানিকে ঝুঁকির মধ্যে রাখবে? এটিও নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিবেচনায় আনা উচিত। যদি সময় কমানো না যায়, সেক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা যতই নিয়মনীতি পরিবর্তন করুক, কোনো লাভ হবে না।
ফাহমিদা বলেন, নির্বাচনের আগে বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি বিমুখ ছিলেন। নির্বাচনের পর নতুন সরকার আসায় বিনিয়োগকারীরা আশার আলো দেখছেন এবং পুঁজিবাজারে আসতে শুরু করেছেন। নির্বাচনের পর এর প্রতিফলনও লক্ষ করা হয়েছে। কিন্তু সে গতি ধরে রাখা যাচ্ছে না। এতে করে বোঝা যাচ্ছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর তুলনায় সাধারণ বিনিয়োগকারী বেশি আসছেন। সাধারণ বিনিয়োগকারী দিয়ে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখা যাবে না। বাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। তা না হলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ