Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 3:51 am

‘পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে কাজ করছি’

চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প গ্রুপ সীমা গ্রুপ। এ গ্রুপের বহুমাত্রিক ব্যবসা রয়েছে। এর মধ্যে বৃহৎ ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সীমা অটো-রি রোলিং মিলস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন মো. মামুন উদ্দিন। সম্প্রতি এ উদ্যোক্তার সঙ্গে আলাপচারিতায় সীমা গ্রুপের ব্যবসা ও বাণিজ্য, ইস্পাত খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা ওঠে আসে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শেয়ার বিজের চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ সাইফুল আলম

শেয়ার বিজ: সীমা গ্রুপের শুরুর দিকে যাত্রার পটভূমি সম্পর্কে বলুন

মামুন উদ্দিন: আমার বাবা মরহুম মোহাম্মদ শফি ১৯৯০ সালের দিকে পুরোনো জাহাজ আমদানি করে ভেঙে স্ক্র্যাপ ব্যবসার মাধ্যমে সীমা গ্রুপের ব্যবসায়িক যাত্রা করেন। এসব স্ক্র্যাপ বিভিন্ন স্টিল মিলে রড উৎপাদনে ব্যবহার হতো। তখন দেশে কম উৎপাদন সক্ষমতার ম্যানুয়াল স্টিল ছিল। যদিও তখন বিদেশ থেকে রড আমদানি হতো। ১৯৯৩ সালের দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় বেশ কয়েকটি ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠে। আর বাজারে রডের চাহিদা বাড়ছে দেখে আমার বাবাও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ইস্পাত কারখানা গড়ার কাজে নেমে পড়েন। যেহেতু আমাদের নিজেদের স্ক্র্যাপ ইয়ার্ড ছিল। ২০০১ সালে আমাদের সীমা অটোমেটিক রি-রোলিং মিলস কারখানা স্থাপিত হয়। ২০০২ সালে কারখানাটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসে। সময়ের সঙ্গে বড় হতে থাকে আমাদের কারখানা। এ ইস্পাত কারখানা পরিচালনায় ব্যাকআপে আমাদের জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড, অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে। সব মিলিয়ে আমাদের ৩০ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা। এখন আমরা দ্বিতীয় প্রজন্ম সীমা গ্রুপের ব্যবসা পরিচালনা করছি। 

শেয়ার বিজ: সীমা গ্রুপের বর্তমান ব্যবসাবাণিজ্যের অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলন

মামুন উদ্দিন: বর্তমানে সীমা অটোমেটিক রি-রোলিং মিলস কারখানায় রড, স্কয়ার বার, টিএমটি, চ্যানেল, এঙ্গেল ইত্যাদি মিলে বছরে আড়াই লাখ টন উৎপাদন হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড থেকে কাঁচামাল উৎপাদন হয়। আর বিদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ আমদানি করতে হয়। এছাড়া ইস্পাত পরিশোধনে আমাদের নিজস্ব অক্সিজেন কারখানা আছে। এসব ব্যবসায় আমাদের ৩০ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় চার হাজার কর্মী কাজ করছেন।

শেয়ার বিজ: আগামীতে ব্যবসা সম্প্রসারণের কি পরিকল্পনা রয়েছে?

মামুন উদ্দিন: আমাদের সীমা অটোমেটিক রি-রোলিং মিলস কারখানায় বছরে বর্তমানে আড়াই লাখ মেট্রিক টন রড উৎপাদিত হয়। এ সক্ষমতা আগামী দুই বছরে আমরা চার লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করতে চাই। আর আগামী পাঁচ বছরে পাঁচ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করব। এছাড়া ইস্পাত তৈরি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আর্ক ফার্নেস প্লান্টও বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ আমাদের দেশের গড় মাথাপিছু ইস্পাতের চাহিদা মাত্র ৬০-৬৫ কেজি; যা ২০৩০ সালের ১৫০ কেজিতে উন্নীত হবে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশে সেভেন সিস্টারসহ দক্ষিণ আফ্রিকায় রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। আমরা এসব সুযোগ কাজে লাগাতে চাই। তাই আস্তে আস্তে বিনিয়োগ বাড়াতে পরিকল্পনা করছি।

শেয়ার বিজ: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির করের ব্যবধান . শতাংশ। অর্থাৎ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান . শতাংশ কম কর দেয়। সুবিধা নেয়ার জন্য কি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্তির পরিকল্পনা আছে?

মামুন উদ্দিন: আমাদের পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্তির পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ইস্যু ব্যবস্থাপনাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শেষ করেছি। এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের মাঝামাঝিতে তালিকাভুক্ত হতে পারব।

পুঁজিবাজারে আসলে একটি কোম্পানির জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো ব্র্যান্ডিং হয়; যা ব্যবসা সম্প্রসারণে ভূমিকা পালন করে। উত্তোলনকৃত টাকায় কারখানা সম্প্রসারণ, লোন পরিশোধ কিংবা নতুন প্রযুক্তির কারখানা স্থাপন করতে পারব; যা কোম্পানির প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এ করের ব্যবধান আরও বাড়ানো হলে ভালো পারফরম্যান্সের কোম্পানিগুলো বাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহ পাবে। এতে বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে।

শেয়ার বিজ: ইস্পাত খাতে দৃশ্যমান প্রযুক্তিগত পরিবর্তন হচ্ছে। বিষয়ে আপনার মতামত কী?

মামুন উদ্দিন: বর্তমানে দেশের ইস্পাতের বাজার প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ চাহিদার নেপথ্যে রয়েছে সরকারের উন্নয়নযজ্ঞ। এদিকে বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৮০ লাখ মেট্রিক টন হলেও এখন পর্যন্ত চাহিদা প্রায় অর্ধেক। তবে আগামীতে মেট্রোরেল নির্মাণ, ফ্লাইওভার, সেতু, চার লেনের মহাসড়ক, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সমুদ্র বন্দর অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণসহ অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাড়ছে। যদিও বর্তমান পরিস্থিতির কারণে কাজ কিছুটা ধীরগতি হলেও এসব প্রকল্পের কাজে গতি আসবে। এছাড়া মাথাপিছু ভোগ ৫০ কেজি থেকে ১৫০ কেজিতে উন্নীত, আবাসন খাত চাঙ্গা এবং ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলোয় রপ্তানি বাড়লে ২০৩০ সালে ইস্পাতের চাহিদা দাঁড়াবে এক কোটি ৮০ লাখ টনে। এতে ইস্পাতশিল্পের প্রবৃদ্ধি বর্তমান ৫-৭ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত হওয়ার সুযোগ আছে। এসব সম্ভাবনা মাথায় রেখে বছর দুই কয়েক আগে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বড় ধরনের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণে কাজ শুরু করে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। আর দেশে মানসম্মত ইস্পাত পণ্যের চাহিদা আছে। এ চাহিদা পূরণে প্রতিনিয়ত ইস্পাতের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াচ্ছে কোম্পানিগুলো। অনেক কোম্পানি আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ কারখানা স্থাপনে বিনিয়োগ করছে; যা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।

শেয়ার বিজ: বর্তমানে রাশিয়াইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাবে জটিল হয়ে উঠছে বিশ্ব পরিস্থিতি। এর প্রভাবে আন্তর্জাতিক ব্যবসাবাণিজ্য, সরবরাহ বিপণন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার দেশের বাজারে ডলারের বিপরীতে টাকা দরপতন জটিল করে তুলছে স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্য। এর প্রভাব আপনাদের ব্যবসায় কেমন

মামুন উদ্দিন: বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ৯৬ টাকায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার পাচ্ছে না। বরং এর চেয়ে দশ-বারো টাকা বেশি দামে এলসি পেমেন্টে ডলার মূল্য দিতে হচ্ছে। আর খোলাবাজারে তো ১১৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আবার ৩০ লাখ ডলারের বেশি এলসি ওপেন করা যাবে না। এতে অল্প সময়ে আমদানিকৃত পণ্যের ব্যয় প্রায় ১০-১৫ শতাংশের মতো বাড়ছে। এসব বিষয় নিয়ে আমদানিকারকদের চিন্তা বাড়ছে। এতে আমদানিকারকরা আর্থিক সংকটে পড়তে পারেন। এ কারণে আমদানিপত্র খোলার হার কমছে। এতে শিল্পের কাঁচামাল, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, চিকিৎসা সামগ্রী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার দায়ভার শেষ পর্যন্ত ভোক্তা সাধারণকেই বহন করতে হচ্ছে। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়ছে। সবমিলিয়ে ভোক্তারা খুব চাপে আছেন। এসব কারণে নির্মাণ খাতে সাময়িকভাবে মন্দাভাব চলছে। ফলে আমাদের ইস্পাত বিক্রয় অনেক কমে গেছে।

শেয়ার বিজ: একজন শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে চট্টগ্রামে ব্যবসা বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে আপনার কী ধরনের সুপারিশ আছে?

মামুন উদ্দিন: চট্টগ্রামকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক রাজধানী করতে হলে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিতে হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার, দ্রুত সময়ে বে-টার্মিনালের কাজ শুরু করা উচিত। যে বন্দরে ৪০ হাজার কনটেইনার জমে গেলে বন্দর অচল হয়ে যায়, সেখানে কীভাবে বিনিয়োগ বাড়বে? এছাড়া ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হিসেবেও চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এবারের বাজেটে লক্ষ্য করলাম বে-টার্মিনাল নির্মাণে বরাদ্দ রাখা হয়নি কিংবা গত পাঁচ বছরের এ প্রকল্পে অগ্রগতিই হয়নি। শুধু শুনেই যাচ্ছি বে-টার্মিনাল নির্মাণ হবে। সবার আগে বন্দর সুবিধা বাড়াতে হবে। এছাড়া সড়কপথে চট্টগ্রামের শিল্প মালিকরা ১৩ টনের বেশি পণ্যবাহী ট্রাকে মাল লোড করতে পারে না। অথচ দেশের অন্যান্য জেলায় ব্যবসায়ীরা সহজে ২০-২২ টন পণ্য পরিবহন করতে পারেন কোনো বাধা ছাড়া। আমাদের দাবি, সবার জন্য একই আইন করা হোক। এতে আমাদের পণ্য পরিবহন খরচ বাড়ছে। এছাড়া মিরসরাইয়ে ইকোমিক জোন হচ্ছে। অথচ এ শিল্পজোনের পাশে বন্দর বা টার্মিনাল নির্মাণে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। আর চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ককে আট লাইনে উন্নীত করার পাশাপাশি পণ্য পরিবহনে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা সময়ের দাবি। এসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত হলে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। এতে চট্টগ্রাম দেশের উন্নয়ন অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। 

শেয়ার বিজ: আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ

মামুন উদ্দিন: আপনাকে ধ্যনাবাদ। শেয়ার বিজের পাঠকদেরও ধন্যবাদ।

সাজেকে পাহাড়ধস

সাড়ে ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক

প্রতিনিধি, রাঙামাটি: রাঙামাটির সাজেকে যাওয়ার পথে নন্দারাম এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর যানচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে জানান বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আকতার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ধসের ঘটনায় রাস্তার দুই পাশে প্রায় পাঁচ হাজার পর্যটক আটকা পড়েন। মঙ্গলবার রাতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। মাটি সরাতে গতকাল থেকেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করেন।

সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, সকালে পাহাড়ধসের ঘটনা আমরা জানতে পেরেছি। সাজেক এলাকায় প্রায় ছোট-বড় মিলে ২০০ গাড়ি রয়েছে, যা গতকাল এসেছিল। গতকাল সকালে অনেকেরই চলে যাওয়ারও কথা ছিল কিন্তু পাহাড়ধসের কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় সবাই আটকা পড়েন। দুপুরের দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হলে গাড়ি ছাড়তে শুরু হয়।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, সাজেকে পাহাড়ধসের কারণে প্রায় পাঁচ হাজার পর্যটক দুই পাশে আটকা পড়েছিলেন। পরে সেনাবাহিনীর ২০ ইসিবির সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয়রা মাটি সরানোর কাজে নেমে পড়েন। বেলা আড়াইটার দিকে মাটি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। এখন কোনো সমস্যা নেই।