পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজারে উত্থান দেখা গেলেও, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর পুঁজিবাজারে টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবারও লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে কমেছে মূল্যসূচক। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, তার দ্বিগুণের বেশি দাম কমেছে। আবার দাম কমার তালিকায় থাকা শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম একদিনে যতটা কমা সম্ভব ততটাই কমেছে। তবে আগের দিনের তুলনায় লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পড়ে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে দেশ ছেড়ে চলে যান। হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম চার কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় ৮০০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর পুঁজিবাজারে ফের টানা দরপতন দেখা যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে সাত কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে; এর মধ্যে ছয় কার্যদিবসেই বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৯ পয়েন্ট কমে যায়। তবে প্রথম আধাঘণ্টার লেনদেন পার হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিতে থাকে পুঁজিবাজারে। দাম কমার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে থাকে। এতে সূচকও ঊর্ধ্বমুখী হয়। একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে যায়।

কিন্তু এরপর এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ালে বাজারে ক্রেতা সংকট দেখা দেয়। ফলে আবার দাম কামার তালিকায় ফিরে আসে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। এমনকি লেনদেনের শেষদিকে একশ’র বেশি প্রতিষ্ঠানের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে দাম বাড়ার তালিকা বড় হওয়ার পাশাপাশি প্রধান মূল্যসূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম কমার তালিকায় যে পরিমাণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সূচকের পতন সে হিসাবে বেশ কম হয়েছে। এর কারণ দাম বাড়ার তালিকায় থাকা বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ বেশি।

ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭৭৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১২১ পয়েন্টে নেমে গেছে। তবে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় দ্বিগুণ প্রতিষ্ঠান থাকলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৮০৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৮০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৩২৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। কোম্পানিটির ৮১ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের ৭৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑওরিয়ন ফার্মা, জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, রবি, আইএফআইসি ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংক। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৯৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হওয়া ২২২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬০টির এবং ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০