পুঁজিবাজারে দেশি কোম্পানিতে বিদেশিদের আগ্রহ বাড়ছে

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকায় পুঁজিবাজারে বিদেশিদের আগ্রহ বাড়ছে। আগে বিদেশিদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতো বহুজাতিক কোম্পানি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন দেশি কোম্পানির দিকে ঝুঁকছেন বিদেশিরা। এদিকে তাদের অংশগ্রহণ দেশের পুঁজিবাজারকে আরও গতিশীল করবে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত এক বছরে বাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো ফার্মা, জিএসপি ফাইন্যান্স, আরগন ডেনিমস, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, বারাকা পাওয়ার, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, এ্যাপেক্স ফুডস, ড্যাফোডিল কম্পিউটারস, ইউনিক হোটেল, ব্র্যাক বাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, তিতাস গ্যাস, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইডিএলসি ও স্কয়ার ফার্মা এসব দেশি কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল। এসব কোম্পানির মধ্যে এক বছর আগে জিএসপি ফাইন্যান্সের বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১ দশমিক ৭০ শতাংশ। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশে। ওষুধ ও রসায়ন খাতের বেক্সিমকো ফার্মায় বিদেশিদের শেয়ার বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি। আগে প্রতিষ্ঠানটিতে তাদের শেয়ার ছিল ৩৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বর্তমানে তা ৩৮ দশমিক ৩১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে আরগন ডেনিমস ১ দশমিক ৬৫ শেয়ার থেকে ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়েছে। এছাড়া সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স দশমিক ২৭ থেকে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১ দশমিক ৭৭ থেকে ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, বারাকা পাওয়ার শূন্য থেকে দশমিক ৫৪ শতাংশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ৩৯ দশমিক ৭ থেকে ৪২ দশমিক ৮৮ শতাংশ, এ্যাপেক্স ফুডস ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, ড্যাফোডিল কম্পিউটারস ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ইউনিক হোটেল ১ দশমিক ৪০ থেকে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বিদেশিদের শেয়ার রয়েছে। আর ব্র্যাক ব্যাংক ৩৫ দশমিক ৭৬ থেকে ৪২ দশমিক ১৫ শতাংশ, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক দশমিক ৪৮ শতাংশ, আইডিএলসি ২ দশমিক ২৩ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, টানা দরপতনের মধ্য দিয়ে ২০১৬ সালে দেশের পুঁজিবাজারে মূল্যস্তর অত্যন্ত বিনিয়োগ অনুকূল অবস্থানে নেমে এসেছিল। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ অবস্থাকে কাজে লাগিয়েছেন। তারা তুলনামূলক সস্তায় শেয়ার কিনেছেন। মূল্যস্তরের পাশাপাশি দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ক্রমহ্রাসমান ব্যাংক সুদহার, আবাসন খাতসহ বিকল্প খাতে বিনিয়োগের সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসা ইত্যাদি বিষয়ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাড়তি বিনিয়োগে উৎসাহী করেছে। তাদের মতে, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে রক্ষণশীলতা থেকে বের হয়ে আসা। দুই বছর আগেও বিদেশিরা বহুজাতিক কোম্পানির বাইরে অন্য কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতেন না। করলেও সে ধরনের কোম্পানির সংখ্যা সাত থেকে আটটির বেশি নয়। কিন্তু বর্তমানে তারা স্থানীয় অনেক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন।

এ বিষয়ে কথা হয় ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা বাড়ার কারণেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখনও দেশি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন। আর এক্ষেত্রে তাদের পছন্দ থাকে ভালো কোম্পানি। দেশি কোম্পানি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বদরবারে জায়গা করে নেবে, এমন আশাতেই বিদেশি বিনিয়োগ দেশে আসছে। এটি দেশ ও পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক।’

একই বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতি ভালো থাকায় বিদেশিরা এখানে বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন। এটা বাজারের জন্য ভালো লক্ষণ।’

জানা গেছে, গত ২০১৬ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পাঁচ হাজার ৫৭ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছেন। এর বিপরীতে বিক্রি করেছেন তিন হাজার ৭১৬ কোটি টাকার শেয়ার। ফলে নিট বিনিয়োগ দাঁড়ায় এক হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে তাদের নিট বিনিয়োগ ছিল মাত্র ১৮৫ কোটি টাকা।

ডিএসই ও সিএসইতে গত বছর এক লাখ ২৬ হাজার ৮৯২ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। শেয়ার কেনা ও বেচার হিসাবে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশিদের লেনদেনের অংশ ছিল সাড়ে ৩ শতাংশ। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এ হার ছিল যথাক্রমে ২ দশমিক ৫৭ এবং ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

বিদেশিদের পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা করেন এমন একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা আশা করছেন, চলতি বছর বিদেশিদের বিনিয়োগ আরও বাড়বে। তারা আরও জানান, বিদেশিরা আগে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেও এখন দেশি কিছু শেয়ারে বেশি বিনিয়োগ করছেন।

গত অর্থবছরে পুঁজিবাজারে সক্রিয় ছিল বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রতি মাসেই আগের তুলনায় বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ। বহুজাতিক কোম্পানির পাশাপাশি এখনও তাদের নজর ভালো মানের বাংলাদেশি কোম্পানির প্রতি। বাংলাদেশের প্রতি বিদেশিদের অগাধ আস্থারই প্রতিফলনই ঘটেছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। এর আগে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতো। কিন্তু এখন তাদের বিনিয়োগের ধরন পাল্টেচ্ছে। বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে সঙ্গে তারা এখন দেশি কোম্পানির দিকে ঝুঁকছেন। বিদেশি পোর্টফোলিও ম্যানেজাররা এখন দেশের কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ, সুশাসন, আর্থিক প্রতিবেদন, লভ্যাংশ প্রদানের হার ও ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি পর্যালোচনা করে শেয়ার কিনছেন। ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে, এমন আশাতে তারা বাংলাদেশি কোম্পানির শেয়ার কিনছেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০