শেখ আবু তালেব: পুঁজিবাজারের সবশেষ সপ্তাহও গেল নেতিবাচক প্রবণতার মধ্য দিয়ে। শেয়ারদর, মূল্য সূচক, বাজার মূলধনের সঙ্গে পতন হয়েছে লেনদেনের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিগুলোর ঘোষিত লভ্যাংশে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। অনেকেই নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছেন। এতে বিনিয়োগ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
প্রত্যাশিত লভ্যাংশ না পাওয়ায় লেনদেন কমিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। আবার কারণ ছাড়াই পতন হচ্ছে মৌলভিত্তির অনেক কোম্পানির শেয়ারদর। কারণ ছাড়াই উত্থানে যাওয়া বাজারের পতন হচ্ছে, সেভাবেই হয়েছে। ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা। ফলে অব্যাহত পতন দেখছে দেশের পুঁজিবাজার। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) গত ৪ নভেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহের লেনদেন তথ্য ও বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন চিত্র।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৮২ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৯০টির, পতন হয় ২৭০টির, অপরিবর্তিত ছিল ১৮টির ও লেনদেন হয়নি চারটির।
এ সময়ে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পতন হয় ১৫৫ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বা দুই দশমিক ২০ শতাংশ, ডিএস৩০ সূচকের পতন হয় ৩৭ দশমিক ৬৩ পয়েন্টে ও ডিএসইএস সূচকে ১৭ দশমিক ২১ পয়েন্ট পতন হয়। আলোচিত সপ্তাহে পূর্বের চেয়ে লেনদেন কমেছে ১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে সাত হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা কয়েক সপ্তাহ ধরেই পতন হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারের। একটানা উত্থানের পর ফের পতনের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রথম দিকে পতনের এ প্রবণতাকে দর সংশোধন বলে মনে করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু এক টানা পতন হওয়ায় সেই ধারণা এখন মিথ্যে বলে ধরা দিচ্ছে তাদের কাছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কৃত্রিম বাজার বেশি দিন স্থায়ী হয় না, যে বিষয়টি বরাবরই বলে আসছিলেন সবাই। এটি এখন প্রকাশ হয়ে পড়ছে।
তার ওপর যোগ হয়েছে কোম্পানিগুলোর নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা। আবার যারা লভ্যাংশ দিচ্ছেন, তাদের বেলায়ও হতাশার চিত্র। প্রত্যাশিত লভ্যাংশ না পাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।
মূলধারার বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্নকে বাড়িয়ে দিয়েছে বড় মূলধনি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর পতন হওয়ায়। বিশেষ করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, লাফার্জহোলসিম, এস্কোয়্যার ফার্মা, ওরিয়ন ফার্মা, ডেল্টা লাইফ ও কয়েকটি ব্যাংকের শেয়ারের দর পতন হওয়ার কোনো কারণ দেখছেন না কেউ। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের শুধু মালিকানা বদল হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে নতুন কোনো খবর নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর পতন হওয়ার কারণ এখনও অজানা। এর প্রভাবে অধিকাংশ মৌলভিত্তির শেয়ারের লেনদেন কম হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীরা ভালো নেই বলে জানিয়েছেন তারা। পুঁজির নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থানে চলে গেছেন তারা। কমিয়ে দিচ্ছেন লেনদেন। শেয়ার ক্রয়ের চেয়ে বিক্রয় প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বেশি। এসব মিলিয়ে পতন হচ্ছে সবগুলো সূচকের।
পতনের সঙ্গে যোগ হয়েছে লোকসান। লেনদেন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুটি ছাড়া সবগুলো খাতেই বিনিয়োগকারীরা লোকসান দিয়েছেন গত সপ্তাহে। সর্বোচ্চ লোকসান দেখা গেছে জীবন বিমা খাতে ছয় শতাংশ। এরপরই আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ, সিরামিকে পাঁচ শতাংশ, সাধারণ বিমায় চার দশমিক দুই শতাংশ ও জ্বালানিতে তিন দশমিক চার শতাংশ।
অবশ্য এর মধ্যেও বস্ত্র খাতের কোম্পানির অনেকেই ইতিবাচক ধারায় লেনদেন শেষ করেছে। এজন্য ডিএসইর গত সপ্তাহের লেনদেনে সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক আট শতাংশ অবদান রাখে বস্ত্র খাত। এরপরই অবদান রাখা খাতগুলো হচ্ছে ব্যাংক ১২ দশমিক ছয় শতাংশ, ওষুধ ১১ দশমিক সাত শতাংশ, প্রকৌশল ছয় দশমিক তিন শতাংশ ও জ্বালানি চার দশমিক আট শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে একক কোম্পানি হিসেবে শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে শীর্ষে উঠে আসে জেমিনি সি ফুড। এরপরই রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ও ফার্মা এইড। অবশিষ্ট সাতটি কোম্পানিই হচ্ছে বস্ত্র খাতের। অন্যদিকে শেয়ারের দর হারানোর শীর্ষ তালিকায় উঠে আসে অরামিট সিমেন্ট, কনফিডেন্স সিমেন্ট, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এরপরই রয়েছে মাইডাস ফাইন্যান্স, প্যাসিফিক ডেনিম ও ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।