দেশের কর্মক্ষেত্রে নারীদের অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। কয়েক বছর আগেও নারীরা কর্মক্ষেত্রে তো দূরের কথা, শিক্ষাক্ষেত্রেও অনেক পিছিয়ে ছিল। বর্তমানে সে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন নারী উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম অবস্থানে। নারীরা এগোচ্ছে ঠিকই; কিন্তু দেশের পুঁজিবাজারে নারীদের তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না। যেমন ব্যাংক খাতে পরিচালক থেকে শুরু করে দাপ্তরিক কাজেও নারীদের বেশ অবদান লক্ষ্য করা যায়; কিন্তু পুঁজিবাজারে সেরকম কোনো চিত্র দেখা যায় না। সবাই চায়, কর্মক্ষেত্রে নারীরা আসুক কিন্তু এখনও অনেকেই নেতা হিসেবে নারীদের দেখতে প্রস্তুত নন। গতকাল এনটিভির ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও ফাহমিদা হক এবং আইনজীবী ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হাসান মাহমুদ বিপ্লব।
ফাহমিদা হক বলেন, দেশের কর্মক্ষেত্রে নারীদের অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। কয়েক বছর আগেও নারীরা কর্মক্ষেত্রে তো দূরের কথা, শিক্ষাক্ষেত্রেও অনেক পিছিয়ে ছিল। বর্তমানে সে পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। এখন নারী উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম অবস্থানে। এটির একটি বিশেষ কারণ হচ্ছে, সব সময়ই দেশে সরকারি ও বিরোধী দলের শীর্ষ পদের দুজনই নারী। যে কারণে নারীদের প্রতি তাদের একটি বিশেষ নজর আগে থেকেই ছিল এবং আছে। আর তারই প্রতিফলন এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। নারীরা এগোচ্ছে ঠিকই; কিন্তু দেশের পুঁজিবাজারে নারীদের তেমন অগ্রগতি নেই। যেমন ব্যাংক খাতে পরিচালক থেকে শুরু করে দাপ্তরিক কাজেও নারীদের বেশ অবদান লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু পুঁজিবাজারে সে রকম কোনো চিত্র দেখা যায় না। তাছাড়া আমি অনুভব করি নারী নেতৃত্বে কিছুটা চ্যালেঞ্জ আছে। আমরা চাই কর্মক্ষেত্রে নারীরা আসুক কিন্তু এখনও অনেকেই নেতা হিসেবে নারীদের দেখতে প্রস্তুত নন। তিনি বলেন, সংকোচনশীল মুদ্রানীতি ঘোষণার কারণে পুঁজিবাজারে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। লক্ষ করলে দেখবেন, বেশ কিছুদিন আগে সাতটি ব্যাংককে জরিমানা করাতে বাজারে একটি বড় দরপতন হয়েছিল। কথা হচ্ছে, জরিমানা করাটি সমস্যা নয়; কিন্তু সেটি ঢালাওভাবে প্রচারের কিছু ছিল বলে মনে করি না। আমি মনে করি, পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট সবারই বাজার নিয়ে আরও সচেতন হওয়া দরকার।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, দেশের সব খাতেই নারীরা অনেক এগিয়ে। স্বাস্থ্য খাতে তো অনেক আগে থেকেই নারীরা এগিয়ে আছে। সে দিক বিবেচনায় দেশের পুঁজিবাজারে সক্রিয় নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা একেবারেই কম। উন্নত অনেক দেশে দেখা যায়, নারীরা কাজ না করলেও তাদের পর্যাপ্ত শিক্ষা আছে। তারা হয়তো কোনো কাজে যুক্ত নয়। আর এ ধরনের লোকেরা কিন্তু বিনিয়োগে সক্রিয় হতে পারেন। তবে দেশের পুঁজিবাজারে আগে নারীরা একেবারেই ছিল না। সে জায়গা থেকে এখন কিছুটা এগিয়ে এসেছে। তাছাড়া দেশে নারীদের কিন্তু বিনিয়োগের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। আমরা জানি, বাংলাদেশে এখনও অধিকাংশ পরিবারের ফান্ড কিন্তু নারীরাই পরিচালনা করে। আর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নারীরা ডিপিএস বা বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা জমিয়ে রাখে, যাতে দুর্দিনে কাজে লাগে। পুঁজিবাজারে যদি নারীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের আরও ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে হয়তো ভালো হতো। পুঁজিবাজার কিন্তু খুব সংবেদনশীল একটি বাজার। এখানে হতাশ হয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন গত তিন মাসে মানুষ যে পরিমাণ পুঁজি হারিয়েছে, এ সময় যদি বিনিয়োগকারীদের সঠিক শিক্ষা না থাকে, তাহলে ক্ষতির মাত্রা আরও বেড়ে যাবে।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম