পুঁজিবাজারে পতনের ধাক্কা বিও অ্যাকাউন্টে

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গত বছরের শেষ দিকে কিছুটা স্বস্তি ফেরায় আবারও পুঁজিবাজারে ফিরতে দেখা যায় বিনিয়োগকারীদের। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারমুখী হন সাধারণ মানুষও। যে কারণে তিন মাসের ব্যবধানে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও অ্যাকাউন্ট বাড়ে প্রায় ৩০ হাজার। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে বাজারে হঠাৎ ছন্দপতন শুরু হলে কমে যায় বিও অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতা। এক মাসের ব্যবধানে বিও খোলার প্রবণতা কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, পুঁজিবাজারে পতনের ধাক্কা লেগেছে বিও অ্যাকাউন্টে। যে কারণে এর সংখ্য উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত এক মাসে বাজারে নতুন বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে পাঁচ হাজার। এর আগের মাসে বিও হিসাব বাড়ে ১০ হাজারের বেশি। সেই হিসাবে মাসের ব্যবধানে অ্যাকাউন্ট কমে গেছে পাঁচ হাজারের বেশি। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ারতথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
সিডিবিএলের তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট বিও রয়েছে ২৯ লাখ ৫৪ হাজার ৫০৪টি। এক মাস আগে এটি ছিল ২৯ লাখ ৪৯ হাজার ৯২টি। বর্তমানে বিও হিসাবধারী পুরুষের সংখ্যা ২১ লাখ ৪৬ হাজার ৮০৮টি। অন্যদিকে নারীদের বিও রয়েছে সাত লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৭টি। আর বর্তমানে কোম্পানির বিও সংখ্যা রয়েছে ১১ হাজার ১৩৯টি।
মূলত ২০১০ সালের পর থেকে বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ মানুষের পুঁজিবজারের প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হয়। ফলে বাজার ছাড়াতে শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে সাধারণ মানুষও পুঁজিবাজারমুখী হননি। যে কারণে একেবারে থমকে যায় বিও খোলা। কোনো কোনো হাউজে দিনে একটি বিও ওপেন হয়নি এমন নজিরও রয়েছে। এরপর ২০১২ সাল থেকে ধীরে ধীরে বিও বাড়তে থাকে। তবে ২০১৬-এর শেষের দিকে আবারও নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার পরিমাণ বাড়ে।

এ প্রসঙ্গে মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার ভালো না হলে এখানে বিনিয়োগকারীরা আসবেন না। এটা খুবই স্বাভাবিক। এখন পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন এটা পুঁজিবাজারের ভালো লক্ষণ। আর এটা দেখে পুরোনো বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও পুঁজিবাজারে ফিরে আসছেন।
একই প্রসঙ্গে জয়তুন সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, বাজারের সার্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়টি জড়িত। বাজার ভালো থাকলেই অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বাড়ে। গত মাসে বাজারে কিছুটা ছন্দপতন দেখা যায়। যে কারণে বিও খোলার প্রবণতা কমে যায়।
এর আগে সময়মতো বিও ফি না দেওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দুই লাখের বেশি বিও। সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রধানত দুই কারণে এবার অসংখ্য বিও বাতিল হযেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে বাজারের মন্দা পরিস্থিতি অন্যটি প্রাইমারি মার্কেট থেকে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা না পাওয়া। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা ৫০০ টাকা দিয়ে বিও নবায়ন করেননি। ফলে এসব অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়ে গেছে।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতিবছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি দেওয়ার সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময়ে বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। তা না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০