মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আইটি খাত দ্রুত অগ্রসর হলেও পুঁজিবাজারে প্রতিযোগিতার দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে তালিকাভুক্ত খাতটির কোম্পানিগুলো। আইটিতে দেশ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ খাতের কোম্পানিগুলোর ভবিষ্যৎ ভালো হবে এমন প্রত্যাশা নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছিলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু তালিকাভুক্ত সাতটি কোম্পানির কোনোটিই বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। এ অবস্থায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে সামর্থ্য খাকলেও শেয়ারহোল্ডারদের নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়ে কোম্পানিগুলো কোনো রকমে ক্যাটাগরির অবস্থান টিকিয়ে রাখছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদের মতে, ‘দেশে আইটি সেক্টরের খুব চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো কেন ভালো করতে পারছে না, সেটা তাদেরই দেখা উচিত। কোনো সমস্যা থাকলে কোম্পানির উন্নয়নের জন্য সেভাবে কাজ করা উচিত।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে পুঁজিবাজারে আইটি খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি হচ্ছে ৭টি। এগুলো হচ্ছে আমরা টেকনোলজি, অগ্নি সিস্টেম, বিডিকম, ইন্টেক, ড্যাফোডিল কমিউন্টার, ইনফরমেশন সার্ভিসেস ও আইটি কনসালট্যান্টস। এর মধ্যে ইনফরমেশন সার্ভিসেস দীর্ঘদিন ধরে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো অবস্থান করছে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে। কোম্পানিগুলো নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়ে ক্যাটাগরি ধরে রেখেছে এমন অভিযোগ বেশ পুরোনো। সংশ্লিষ্টদের মতে, বেশ কয়েকটি কোম্পানি আরও বেশি লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষমতা রাখে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, আইটি খাতের কোম্পানিগুলোর আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হলেও এখন বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান তা কাটিয়ে উঠেছে। কিন্তু তারপরও কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ প্রদানের পরিমাণ বাড়াচ্ছে না। এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশ প্রদানের পরিমাণ ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে।
সর্বশেষ লভ্যাংশ প্রদানের দিকে তাকালে দেখা যায়, বিডিকম শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১২ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। এছাড়া ড্যাফোডিল কম্পিউটার ও আইটি কনসালট্যান্টস লভ্যাংশ দিয়েছে ১৫ শতাংশ করে। বাকি তিন কোম্পানি ইনটেক, অগ্নি সিস্টেম ও আমরা টেকনোলজি সর্বশেষ লভ্যাংশ দেয় ১০ শতাংশ করে। এছাড়া লোকসানে ভরপুর ইনফরমেশন সার্ভিসেস দীর্ঘদিন থেকে শেয়ার হোল্ডারদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ প্রদান করছে না।
এদিকে বেশিভাগ প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ প্রদানে স্থির থাকলেও গত বছর অধিকাংশ কোম্পানিই মুনাফায় রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১০১৬ সালে বিডিকমের মুনাফা ৬ কোটি ৭০ লাখ। আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৯৭ লাখ। বছরের ব্যবধানে ৭৩ লাখ টাকা লাভ করলেও লভ্যাংশ অপরিবর্তিত রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্য কোম্পানি অগ্নি সিস্টেমও আগের চেয়ে ৪৩ লাখ টাকা মুনাফা করেও বিডি কমের মতো অপরিবর্তিত রেখেছে লভ্যাংশ। অপর দিকে ড্যাফোডিল কম্পিউটার আগের চেয়ে তিন কোটি টাকার বেশি মুনাফা করে লভ্যাংশের হার বাড়িয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। একইভাবে আইটি কনসালট্যান্টস গত বছর মুনাফা করে ৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগে যার পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ৩ কোটি টাকা মুনাফা করলেও এ প্রতিষ্ঠানটি লভ্যাংশ প্রদান করেছে মাত্র ১৫ শতাংশ। যা বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার বাইরে। তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানি আমরা টেকনোলজির গত বছরের চেয়ে মুনাফা কমেছে প্রায় ১ কোটি টাকা। সর্বশেষ বছরে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ৯ কোটি ১২ লাখ টাকা।
এই খাতের সবচেয়ে রুগ্ন প্রতিষ্ঠান এ খাতের তালিকাভুক্ত পুরোনো প্রতিষ্ঠান ইনফরমেশন সার্ভিসেস। বছরের পর বছর কোম্পানটির লভ্যাংশের পরিমাণ আরও ভারি হচ্ছে। ২০১৬ সালে এ প্রতিষ্ঠানের লোকসানের পরিমাণ ৭৯ লাখ টাকা। আগের বছর যার পরিমাণ ৩৬ লাখ টাকা। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি ৭৩ পয়সা লোকসান থাকার পাশাপাশি রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারপ্রতি মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও। যার পরিমাণ ৭৮৫ শতাংশ।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে অগ্নি সিস্টেমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশে এই সেক্টরের ভবিষ্যৎ আরাও ভালো হবে। সেই সঙ্গে শেয়ার বাজারের যারা তালিকাভুক্ত হয়েছে, তারাও ভালো করতে পারবে।’
নিজের প্রতিষ্ঠানের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে মুনাফা করেও আমরা ভালো লভ্যাংশ দিতে পারি না। এটা আমাদের অনিচ্ছাকৃত।’
Add Comment