পুঁজিবাজারে প্রবাসী বিনিয়োগ উৎসাহিত করুন

গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘পুঁজিবাজারে বাড়ছে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি গোপন সূত্রে পাওয়া কোনো খবর নয়, বরং তা বিভিন্ন সরকারি তথ্য-উপাত্তেই প্রকাশিত। সুখবর হলো, স্থানীয় পুঁজিবাজারে বিগত কয়েক সপ্তাহে সংখ্যায় যেমন বেড়েছে প্রবাসী বাংলাদেশীর অংশগ্রহণ, তেমনই বেড়েছে তাদের বিনিয়োজিত অর্থের পরসেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্যমতে, বর্তমানে শেয়ারবাজারে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) রয়েছে এক লাখ ৬৭৬টি; যা দুই মাস আগেও ছিল এক লাখ ৪৬ হাজার ৭৩৬টি। বিষয়টি উল্লেখযোগ্য এজন্যও যে, ইতোপূর্বে সময়মতো ফি পরিশোধ না করায় বন্ধ হয়েছিল প্রবাসীদের আনুমানিক পাঁচ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট। সেদিক থেকে ওই উন্নতি চোখে পড়ার মতো। আবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, পুঁজিবাজারে প্রবাসীদের লেনদেনকৃত অর্থের পরিমাণও বেড়েছে এই সময়ে। সেপ্টেম্বরে তাদের মোট লেনদেন ছিল ৯৪৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা; যা পূর্ববর্তী মাসের তুলনায় কমপক্ষে ১১৪ কোটি টাকা বেশি। এগুলোকে সুলক্ষণ বলেই ধরে নিতে হয়। খেয়াল করার বিষয়, স্থানীয় সাধারণ বিনিয়োগকারীর তুলনায় প্রবাসী সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ধরন আলাদা। তুলনামূলক যৌক্তিক পরিস্থিতি ও লাভজনকতা না থাকলে সাধারণত বিনিয়োগে আগ্রহ দেখান না তারা। সেখান থেকে অনেকে অনুমান করে নিতে চান, আপাতত তেমন পরিবেশই বিরাজ করছে আমাদের শেয়ারবাজারে। বাজারসংশ্লিষ্টরাও বলছেন, বেশিরভাগ শেয়ারের মূল্য-আয় অনুপাত তথা পিই রেশিও হাতের নাগালে থাকায় সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীরই আগ্রহ বাড়ছে শেয়ারবাজারে।

ডিএসই’র সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী এ দৈনিকের কাছে মন্তব্য জানিয়েছেন, ‘বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ থাকলে দেশি-বিদেশি কেউই বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। এখন পুঁজিবাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। যে কারণে সব ধরনের লেনদেনও বাড়ছে।’ স্থানীয় শেয়ারবাজার যে বেশ কিছুদিন ধরেই স্থিতিশীল, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে এর সঙ্গে আরেকটি উপাদান যোগ করা যেতে পারে। সেটি হলো বৈশ্বিক পরিস্থিতি। লক্ষণীয়, চলতি বছর বিশ্ব শ্রমবাজারে প্রবাসী-আয় কমেছে বলে খবর রয়েছে গত কয়েকদিনের দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে। দুর্ভাগ্যজনক যে, যেসব দেশের প্রবাসী-আয় কমেছে, সেগুলোর মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশ অগ্রগণ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতির পাওয়ার হাউজগুলোয়, বিশেষত ইউরোপ ও আমেরিকায় বিশ্বায়ন ও অভিবাসনবিরোধী কট্টর রাজনৈতিক শক্তির উত্থানই এর মূল কারণ। ওই দেশগুলোর সাধারণ নির্বাচনেও তারা ভালো করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) খতিয়ে দেখা দরকার, বিশ্বায়নবিরোধী ওই উপাদানের কোনো প্রভাব রয়েছে কি না স্থানীয় পুঁজিবাজারে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সাম্প্রতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে। যদি ওই উপাদানের কোনো প্রভাব এ মূহূর্তে শেয়ারবাজারে থেকে থাকে, তাহলে কিন্তু শঙ্কা থেকে যায়Ñবৈশ্বিক পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় তাদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ার। সেক্ষেত্রে সাময়িক এ উন্নতিটি প্রতিভাত হবে ক্ষণস্থায়ী ‘বাবল’ হিসেবে এবং তার কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাজারের ওপর। সে পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার। দ্বিতীয় কথা হলো, প্রবাসী বিনিয়োগ স্থানীয় পুঁজিবাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এর বৃদ্ধি শুধু নয়, একে ধরে রাখার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। দুঃখজনক হচ্ছে, দেশের পুঁজিবাজারে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ আকর্ষণের আয়োজন যেমন কম, তেমনই কম আগত বিনিয়োগ ধরে রাখার ব্যবস্থা। এখানে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ বলা যায় আপনাআপনি আসে; আবার আপনাআপনি চলে যায়। অথচ এসবের প্রতি সযত্ন দৃষ্টি দেওয়া দরকার। কেননা এর সঙ্গে আমাদের পুঁজিবাজারের দীর্ঘকালীন স্থিতিশীলতার বিষয়টি যুক্ত!

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০