মো. আসাদুজ্জামান নূর: বড় পতন দিয়ে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস পার করেছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এদিন লেনদেনে অংশ নেয়া ৯৬ শতাংশ কোম্পানির দরপতন হয়েছে। যার কারণে কোনো খাতেই দর বৃদ্ধি দেখেননি বিনিয়োগকারীরা। সূচক হ্রাস পেয়েছে দুই শতাংশেরও বেশি।
বাজার পতনের কারণ হিসেবে ঘুরেফিরে ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজের সাবেক প্রধান নির্বাহী (সিইও) সাইফুল ইসলাম বলেন, ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলায় যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা বাজারে প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নির্দেশনা তা বাজারের জন্য নেতিবাচক। এটাও পতনের পেছনে আরেকটি কারণ।
তিনি বলেন, শুধু নিজস্ব সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোকে প্রদত্ত ইকুইটি, দীর্ঘমেয়াদি ইকুইটি/ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি (বিডি) লিমিটেড ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর শেয়ার, পুঁজিবাজারে জড়িত সাবসিডিয়ারি কোম্পানি, স্টক ডিলারকে প্রদত্ত ঋণের স্থিতি, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠিত কোনো তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা এই বিনিয়োগ হিসাবের বাইরে থাকবে। কিন্তু শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ক্রয়মূল্যে নির্ধারণ করা হোক। ওই নির্দেশনার ফলে দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের ক্রয়মূল্যে গণনা করার দাবিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে; যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে।
রোববার ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ১৬৩ পয়েন্ট হারিয়েছে, যা চলতি বছরে সর্বোচ্চ। দিন শেষে সূচক অবস্থান করছে ছয় হাজার ৬৭৬ পয়েন্টে। আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার শুরুর দিনে সূচক পড়ে ১০৯ পয়েন্ট। প্রধান সূচকের সঙ্গে রোববার অপর দুই সূচকেরও পতন হয়েছে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ‘ডিএস৩০’ ৪৭ পয়েন্ট কমেছে। এ ছাড়া শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সূচক ‘ডিএসইএস’ কমেছে ৩০ পয়েন্ট।
সূচকের বড় পতনে বড় ভূমিকা ছিল ওয়ালটন, রবি এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর। এ তিন কোম্পানির শেয়ারদর পতনের কারণে সূচক হারিয়েছে ৩৪ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট। এর মধ্যে শুধু ওয়ালটনের কারণেই সূচক হ্রাস পেয়েছে ১৬ দশমিক ৫১ পয়েন্ট। আর রবি ৯ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর কারণে ৮ দশমিক ৩০ পয়েন্ট সূচক হ্রাস পেয়েছে।
অন্যদিকে লাফার্জহোলসিম, স্কয়ার ফার্মা এবং ইউনাইটেড পাওয়ার গ্রিডের কারণে সূচক কমেছে আরও ১৫ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট। অন্যদিকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, বেক্সিমকো, আরএকে সিরামিক এবং আইএফআইসি ব্যাংক সূচক নামিয়েছে ১২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট। এই দশ কোম্পানি মিলেই সূচক কমিয়েছে ৬২ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট।
বিপরীতে সূচক বাড়ানোর তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে গ্রামীণফোন। কোম্পানিটির কারণে সূচকে ৪ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট যোগ হয়েছে। এছাড়া প্যাসিফিক ডেনিমস, সোনালী পেপার, ডরিন পাওয়ার, পূবালী ব্যাংক, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, এডিএন টেলিকম, ইয়াকিন পলিমার, পেনিনসুলা চিটাগং এবং মোজাফ্ফর হোসাইন স্পিনিং মিলের কারণে সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ১২ পয়েন্ট। সব মিলিয়ে এই দশ কোম্পানি সূচকে ৫ দশমিক ৫০ পয়েন্ট যোগ করতে সক্ষম হয়।
সূচকের বড় পতনের সঙ্গে টাকার অঙ্কে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। গতকাল ডিএসইতে ৯১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে; যা আগের দিনের চেয়ে ১৩৮ কোটি টাকা কম। আগের কার্যদিবসে এটি ছিল এক হাজার ৫০ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে বস্ত্র খাত। মোট লেনদেনের ১৫ শতাংশই ছিল খাতটির দখলে। এছাড়া ওষুধ ও রসায়ন ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ, ব্যাংক ১১ দশমিক ১২ শতাংশ, বিবিধ ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ, প্রকৌশল খাতে ৯ দশমিক ২১ শতাংশ, খাদ্য ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ ও জ্বালানি খাতে ৫ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। বাকিগুলোর লেনদেন ৫ শতাংশের নিচে ছিল। গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয় ৩৭৯টি কোম্পানি। এর মধ্যে দরপতন হয়েছে ৩৬৫টি কোম্পানির। বিপরীতে দর বেড়েছে মাত্র ১০টির ও দর ধরে রাখতে পেরেছে মাত্র চারটির। সিংহভাগ সিকিউরিটিজের দর পতনের কারণে সব খাতেই বড় দরপতন হয়েছে। এর মধ্যে বস্ত্র, ওষুধ ও বিবিধ খাতে তিন শতাংশ করে কোম্পানির দর পতন হয়েছে।