মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় পুঁজিবাজারে প্রবাসী বিনিয়োগকারী ও বৈদেশিক লেনদেন বাড়ছে। গত দুই মাসে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বেড়েছে ছয় হাজারের অধিক। অন্যদিকে সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বরে পুঁজিবাজারে বৈদেশিক লেনদেন এর আগের তুলনায় ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগের সব ধরনের সুযোগ তৈরি হওয়ায় দেশের পুঁজিবাজারে এখন বিনিয়োগের অনুক‚ল পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রায় সব খাতের কোম্পানিতে রয়েছে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ। অধিকাংশ শেয়ারের মূল্য-আয় অনুপাত বা পিই রেশিও রয়েছে হাতের নাগালে। যে কারণে পুঁজিবাজারে সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘বাজারে বিনিয়োগের অনুক‚ল পরিবেশ থাকলেই বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ে। কারণ বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ থাকলে দেশি-বিদেশি কেউই বিনিয়োগে আগ্রহী হন না।’
তিনি বলেন, ‘এখন পুঁজিবাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। যে কারণে সব ধরনের লেনদেনও বাড়ছে।’
একই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজার এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। যে কারণে এ বাজারের প্রতি সব শ্রেণির মানুষের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এটা অবশ্যই ভালো দিক। তবে এর মধ্যে বাজারে কিছু শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটা সময় মঙ্গল না-ও হতে পারে।’ সে কারণে তাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এ অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, ‘যার পুঁজি তাকেই নিরাপদে রাখতে হবে। আর এজন্য সতর্ক হয়ে বিনিয়োগ করার বিকল্প নেই।’
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত দুই মাসে পুঁজিবাজারে প্রায় ছয় হাজার প্রবাসী বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) হিসাবমতে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে এ ধরনের বিও রয়েছে এক লাখ ৫২ হাজার ৬৭৬টি। দুই মাস আগে এ সংখ্যা ছিল এক লাখ ৪৬ হাজার ৭৩৬টিতে। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে তাদের বিও বেড়েছে ছয় হাজারের বেশি। এর আগে সময়মতো বিও ফি পরিশোধ না করার প্রবাসীদের পাঁচ হাজার বেনিফিসিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে এক মাসের ব্যবধানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রায় ১১৪ কোটি টাকা বেড়েছে বৈদেশিক বিনিয়োগ। সেপ্টেম্বর মাসে তাদের মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৪৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, যা এর আগের মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।
জানা যায়, সেপ্টেম্বর মাসজুড়েই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার আগ্রহ ছিল বেশি। ২০১৭ সালের এ মাসে বৈদেশিক লেনদেনে ক্রয়কৃত সিকিউরিটিজের পরিমাণ ছিল ৫৬০.৫১ কোটি টাকা এবং বিক্রয়কৃত সিকিউরিটিজের পরিমাণ ছিল ৩৮৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত মাসে বৈদেশিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮৩২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্রয়কৃত সিকিউরিটিজের পরিমাণ ছিল ৪৩২ কোটি টাকা এবং বিক্রয়কৃত সিকিউরিটিজের পরিমাণ ছিল ৪০০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে নিট অবস্থান গত মাসের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৫০ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈদেশিক লেনদেন পুঁজিবাজরের শক্ত ভিতকেই নির্দেশ করে। যেকোনো পুঁজিবাজারেই বৈদেশিক লেনদেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। ২০১০ সালের ধসের পর আইনি সংস্কারসহ নানা উদ্যোগের ফলে বাজারে একধরনের স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে। এছাড়া অনেক মৌলভিত্তির শেয়ারের দাম অনেক নিচে নেমে আসে। আর একটু একটু করে এসব শেয়ারে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ছে।
Add Comment