পুঁজিবাজারে বাড়ুক প্রবাসীদের অংশগ্রহণ

উৎসাহ জোগানোর ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ না থাকলেও দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী প্রবাসী খুব একটা কম নয়। প্রাপ্ত তথ্যমতে, তাদের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এ থেকে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট, প্রবাসীদের এখানে বিনিয়োগে উৎসাহ জোগানো এবং বাজার সম্পর্কিত হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করা গেলে সংখ্যাটি আরও বাড়বে; একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে প্রবাসীদের বিনিয়োগ। দেশের পুঁজিবাজারের জন্য এটা আশার সংবাদ। এখানকার পুঁজিবাজারে ডে ট্রেডিং প্রবণতা দেখা যায় মূলত স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। আমাদের ধারণা, এমনটি করবেন না প্রবাসীরা। ফলে এর সুফল পড়বে বাজারেও। ডে ট্রেডিং প্রবণতার কারণেই মূলত পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা স্থায়ী হয় না। প্রবাসীদের বিনিয়োগ বাড়লে এ সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে বলে আশা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেছেন, ‘প্রবাসীর অংশগ্রহণ পুঁজিবাজারকে সবসময় গতিময় করে তোলে।’ তার মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণের সুযোগ নেই। বাস্তবতা হলো, আমাদের প্রবাসী জনশক্তি ৮০ লাখের বেশি হলেও বিদ্যমান সম্ভাবনা কাজে লাগানো হচ্ছে না। এমন অনেক প্রবাসী রয়েছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও এর সুফলগুলো তাদের একেবারে অজানা। এজন্য আমরা মনে করি, পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও এর সম্ভাবনাগুলো তাদের জানানো উচিত কর্তৃপক্ষের। বুঝেশুনে পোর্টফোলিও গঠনের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে পারলে এর সুফল সংশ্লিষ্টরা পাবেন নিঃসন্দেহে।

বস্তুত প্রবাসীরা তাদের আয়ের যে অংশ দেশে পাঠান, তা থেকে সঞ্চয় হয় সামান্য। বিনিয়োগ হয় আরও কম। বিভিন্ন জরিপের ফলে দেখা গেছে, এ সঞ্চয় তারা করেন মূলত ব্যাংকে। এখন ব্যাংকিং খাতে আমানতের মুনাফা কমে যাওয়ায় তার প্রভাব কিছুটা পড়েছে প্রবাসীদের সঞ্চয়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে বেড়ে উঠেছে অযাচিত ভোগপ্রবণতা। অর্থনীতির জন্য এটা শুভ ইঙ্গিত নয়। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ও অলস অর্থ সম্পর্কিত যেসব তথ্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রতিবেদনে লক্ষ করা যাচ্ছে, তাতে খাতটিতে আমানতের মুনাফা শিগগির বাড়বে বলে মনে হয় না। এ অবস্থায় প্রবাসীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহ জোগানো গেলে তাদের সঞ্চয়প্রবণতা যেমন স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসবে, তেমনি এর সুফল পাবে অর্থনীতি। আর অযাচিত ভোগের যে প্রবণতা কিছু প্রবাসীর পরিবারে লক্ষ করা যাচ্ছে, সেটাও রাখা যাবে নিয়ন্ত্রণে।

ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে প্রবাসী আয়প্রবাহ গত বছরের তুলনায় কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ। অনেকে মনে করেন, ব্যাংকিং খাতে আমানতের মুনাফা হ্রাসও এর পেছনে কাজ করছে অন্যতম কারণ হিসেবে। আগে যেসব প্রবাসী জমানোর জন্য দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠাতেন, সেটায় তারা তেমন উৎসাহ পাচ্ছেন না। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহ জোগানো গেলে এ সমস্যারও কিছুটা সমাধান হবে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসী আয়। এটা বাড়ানো না গেলে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে ভারসাম্য রাখা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠবে। এজন্য আমরা চাইবো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ব্যাপারে প্রবাসীদের উৎসাহ জোগাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। বিদেশে যাওয়ার আগে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য যেসব কর্মসূচি বিদ্যমান, সেখানেই দেওয়া যেতে পারে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত ধারণা। ইতোমধ্যে যারা প্রবাসে রয়েছেন, তাদের এ-সম্পর্কিত জ্ঞান দেওয়ার জন্য স্থানীয় দূতাবাসের সহায়তায় কর্মসূচির আয়োজন করতে পারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (এসইসি) জোগাতে পারে প্রয়োজনীয় সহায়তা। বলা বাহুল্য, দেশের পুঁজিবাজার এখন মোটামুটি স্থিতিশীল। এ অবস্থায় প্রবাসীদের এখানে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা যতটা সহজ হবে, অন্য সময় তা হবে না। এজন্য উদ্যোগ নেওয়া দরকার এখনই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০