Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 12:51 am

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহ কম ব্যাংক ও বিমার

আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর এককভাবে ইক্যুইটির ২৫ শতাংশ এবং সব সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোকে সে পরিমাণে বিনিয়োগ করতে দেখা যাচ্ছে না। ২০২২ সালে ব্যাংকগুলোর এককভাবে বিনিয়োগ ছিল ১৬ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং সমন্বিতভাবে বিনিয়োগ করেছে ২৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। একইভাবে দেশের সব বিমা কোম্পানির পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ খুবই কম। এর মধ্যে জীবন বিমার বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ইক্যুইটির পাঁচ শতাংশ এবং সাধারণ বিমা কোম্পাগিুলোর বিনিয়োগ ২০ শতাংশের নিচে ছিল। সেক্ষেত্রে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ ১০ শতাংশের বেশি হলেও আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে কোম্পানিগুলো প্রায় পাঁচ শতাংশ বিনিয়োগ কমিয়েছে। ফলে পুঁজিাবাজারে বিনিয়োগে ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিগুলো আগ্রহী নয় বলে জানিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্যমতে, ২০২২ সালের শেষে ব্যাংকের সব সহযোগী প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে সমন্বিত বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৩০ শতাংশে। এককভাবে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ হয়েছে ১৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। সেক্ষেত্রে এক বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর সমন্বিত বিনিয়োগ ১ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়েছে। এককভাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বেড়েছে শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর এককভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ছিল ১৫ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং সমন্বিভাবে বিনিয়োগ হয়েছে ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর এককভাবে ইক্যুইটির ২৫ শতাংশ এবং সমন্বিতভাবে পুঁজিবাজারে ৫০ শতাংশ বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও গত চার বছরেও সীমা অনুযায়ী বিনিয়োগ করেনি তারা। সব সময় এককভাবে ২০ শতাংশের নিচে এবং সমন্বিতভাবে ৩০ শতাংশের নিচে বিনিয়োগ করে আসছে

ব্যাংকগুলো। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর এককভাবে বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমা থেকে ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং সমন্বিত বিনিয়োগ ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ কম ছিল।

অন্যদিকে পুঁজিবাজরে বিমা খাতের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ২০২২ সালে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ ছিল পাঁচ শতাংশ, যা এর আগের বছরেও একই পরিমাণে ছিল। তবে জীবন বিমা কোম্পানির বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি ছিল সরকারি বন্ডে। ২০২২ সালে সরকারি বন্ডে

 আলোচ্য খাতটির বিনিয়োগ ছিল ৫৫ শতাংশ, যা আগের বছর থেকে পাঁচ শতাংশ বেশি। আর সবচেয়ে কম বিনিয়োগ হয়েছে পুঁজিবাজারে।

এছাড়া ২০২২ সালে পুঁজিবাজারে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ ছিল ১৫ শতাংশ, যা এর আগের বছরের চেয়ে পাঁচ শতাংশ কম। ২০২১ সালে আলোচ্য খাতটির পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ছিল ২০ শতাংশ। সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি হয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এফডিআরে। আলোচ্য খাতে ২০২২ সালে কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ ছিল ৬০ শতাংশের বেশি।

তথ্যমতে, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ ২০২২ সালে একক এবং সমন্বিত উভয় দিক থেকেই বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিনিয়োগ এখনও নির্ধারিত সীমার নিচে রয়েছে। এতে বোঝা যায়, বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমার নিচে থাকায় শেয়ারদর কমে যাওয়ায় তাৎক্ষণিক স্থিতিশীলতার ধাক্কা ব্যাংক খাতে বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না। বর্তমানে পুঁজিবাজারের সার্বিক দিক বিবেচনায় অধিকাংশ শেয়ার লেনদেন না হয়ে ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। সেই সঙ্গে শেয়ারদর হঠাৎ কমে যায়। এ অবস্থায় বিনিয়োগ সীমার কম রেখে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে চায় ব্যাংক। ফলে নির্দিষ্ট সীমা অনুযায়ী বিনিয়োগে ব্যাংকের আগ্রহ কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পুঁজিবাজারে ২০২২ সালে ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ছিল আট হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে ছিল তিন হাজার ৯৭১ কোটি এবং ব্রোকারেজ হাউসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ছিল চার হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। পুঁজিবাজারে ঋণের বিপরীতে ২০২২ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে মার্চেণ্ট ব্যাংকে খেলাপি ঋণ (এনপিএল) ৫১ কোটি এবং ব্রোকারেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ৩৯ কোটি টাকা। পুঁজিবাজারে গ্রোস খেলাপি ঋণের হার ১ দশমিক ১১ শতাংশ ছিল।

এছাড়া তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর কর্মক্ষমতা, বিশেষ করে মূলধন রিজার্ভ পর্যাপ্ততার অনুপাত, খেলাপি ঋণ এবং সম্পদের রিটার্নের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের সামগ্রিক কর্মক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এর প্রধান কারণ হচ্ছেÑবেশিরভাগ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক তালিকাভুক্ত এবং ব্যাংক খাত বাজার মূলধনের একটি বড় অংশ দখল করে আছে। বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩৫টি ব্যাংক তালিকাভুক্ত রয়েছে এবং বাজার মূলধনের ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ হচ্ছে ব্যাংক খাতের। প্রতিবেদন অনুসারে, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর একক বিনিয়োগের মধ্যে রয়েছে শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড, ডিবেঞ্চার এবং প্লেসমেন্টে শেয়ার।

এদিকে পুঁজিবাজারে জীবন ও সাধারণ উভয় বিমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের বিষয়ে নির্দিষ্ট সীমার বিষয়ে উল্লেখ নেই। ফলে বোঝা যায়, কোম্পানিগুলো চাইলে তাদের বিনিয়োগ বাড়াতে পারে। কিন্তু পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম কমে যাওয়া এবং অস্থিরতার কারণে যাতে বিনিয়োগ আটকে না যায় ও বড় ক্ষতির সম্মুখীন না হয়, তাই এ খাতে বিনিয়োগে তাদের আগ্রহ কম।