পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে এগিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

নিয়াজ মাহমুদ: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে এগিয়ে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। গত বছর (২০১৬) পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে শীর্ষ দশটি ব্যাংকের মধ্যে প্রথম চারটিই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। ব্যাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত বছর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে শীর্ষে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। আলোচ্য বছরে ব্যাংকটি পুঁজিবাজারে মোট বিনিয়োগ করেছে এক হাজার ৯১৯ কোটি টাকা। এর বিপরীতে শেয়ার বেচাকেনা করে আয় করেছে ১১৭ কোটি টাকা। যা বিনিয়োগের ছয় দশমিক ১০ শতাংশ।
কথা হয় অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ শামস-উল-ইসলামের সঙ্গে। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার জন্য আমরা একটি শক্তিশালী কমিটি করেছি। কমিটির পরামর্শে একটি গবেষণা টিম কাজ করছে। তাদের গবেষণার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন কোম্পানিতে আমরা বিনিয়োগ করেছি। অন্যদিকে বাজারও বেশ ইতিবাচক ছিল। সব মিলিয়ে যা হয়েছে, ভালো আয় হয়েছে।’
পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতের বিনিয়োগের শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জনতা ব্যাংক। এক হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ব্যাংকটি আয় করেছে ৯২ কোটি টাকা অর্থাৎ বিনিয়োগের পাঁচ দশমিক ৪৮ শতাংশ আয় করেছে।
এরপরই রয়েছে সোনালী ব্যাংক। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এ ব্যাংকটি গত বছরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে এক হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। এ বিনিয়োগ থেকে ব্যাংকটির আয় হয়েছে ১০২ কোটি টাকা। বিনিয়োগের বিপরীতে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ আয় করে আয়ের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। ৬২৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় করেছে ৫৮ কোটি টাকা। যা বিনিয়োগের বিপরীতে আয় করেছে ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। শেয়ার লেনদেন থেকে আয়ের দিক দিয়ে বিডিবিএল রয়েছে প্রথম স্থানে।
অন্যদিকে ৬১৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পঞ্চম স্থানে রয়েছে এক্সিম ব্যাংক। এর বিপরীতে ব্যাংকটি শেয়ার-ক্রয়-বিক্রয় করে আয় করেছে ৪৩ কোটি টাকা, যা মোট বিনিয়োগের ছয় দশমিক ৯৮ শতাংশ আয়।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড ২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে ৬১০ কোটি টাকা। বিনিয়োগের শীর্ষ তালিকার ষষ্ঠ স্থানে থাকা এ ব্যাংকটি আয় করেছে ৩৫ কোটি টাকা অর্থাৎ পাঁচ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
বিনিয়োগের পরিমাণে সপ্তম স্থানে রয়েছে বেসরকারি খাতের পূবালী ব্যাংক। ব্যাংকটি ৫৪৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আয় করেছে ৩৩ কোটি টাকা, যা পুঁজিবাজারে ব্যাংকটির বিনিয়োগের ছয় দশমিক তিন শতাংশ।
গত বছর ৫১৬ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে এ তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংক। ২০০০ সালে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটি আয় করেছে ২৩ কোটি টাকা। পুঁজিবাজারে মোট বিনিয়োগের চার দশমিক ৪৬ শতাংশ।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক গত বছর বিনিয়োগ করেছে ৪৭২ কোটি টাকা। শেয়ার বেচাকেনা বাবদ ব্যাংকটি আয় করেছে ২৯ কোটি টাকা, যা বিনিয়োগের ছয় দশমিক ১৪ শতাংশ।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে শীর্ষ দশের তালিকায় সবশেষে রয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। ২০০৭ সালে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটি ২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে ৪৬৫ কোটি টাকা। এ সময়ে শেয়ার কেচাবেচা করে আয় করেছে মাত্র ৯ কোটি টাকা। যা বিনিয়াগের হিসেবে এক
দশমিক ৯৪ শতাংশ। এদিকে ৪২৭ কোটি টাকা আয় থেকে এবি ব্যাংক আয় করেছে ২৯ কোটি টাকা। আর সিটি ব্যাংক ২০১৬ সালে বিনিয়োগ
করেছে ২৩৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ১৯৪ কোটি টাকা আয় করে সব ব্যাংকের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক মো. রকিবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গবেষণা করে দেখছে, বাজার দীর্ঘমেয়াদে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। এজন্য তারাও দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করে মুনাফা করার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে অনেক ব্যাংক কাক্সিক্ষত আয় করেছে।