Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:48 pm

পুঁজিবাজারে বিমার টাকা বিনিয়োগ ইতিবাচক হতে পারে

পুঁজিবাজারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে বিমা। বিমা খাতের টাকার মূল বিনিয়োগের স্থান হচ্ছে ব্যাংকে এফডিআর করা। এ টাকা যদি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যায়, সেটি বাজারের জন্য ইতিবাচক হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও মোহাম্মদ আলী এবং পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. ফোরকান উদ্দিন, এফসিএ।
মোহাম্মদ আলী বলেন, চলতি বছর পুঁজিবাজারের অবস্থা তেমন ভালো দেখা যাচ্ছে না। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিন ধরে কোনো মুনাফা না হওয়ায় তাদের মধ্যে একটি অস্থিরতা কাজ করছে। যেসব স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে, লোকসান হলেও ভালো কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে ওইসব কোম্পানির দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। এটা আসলে বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা। আইসিবি বন্ড ইস্যু করে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করবে। দুই হাজার কোটি টাকার মধ্যে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলো পাবে। অর্থাৎ এ টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে; ফলে বাজারে একটি ভারসাম্য ফিরবে বলে মনে করি। পুঁজিবাজারের আরেকটি সমস্যা রয়েছে। কাউকে যদি শেয়ার উপহার হিসেবে দেওয়া হয় এবং পরে সেসব শেয়ার স্থানান্তর করে নিয়ে নামে-বেনামে বিক্রি করে দেয়, তবে এখানে কারসাজির একটি সুযোগ থাকে। যারা উদ্যোক্তা, তাদের সচেতন করতে হবে এবং বিনিয়োগকারীদেরও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বর্তমানে যে অবস্থায় পুঁজিবাজার রয়েছে, তা নির্বাচনের পর ভালো অবস্থানে যাবে বলে আমার ধারণা। বিনিয়োগকারীর উদ্দেশে তিনি বলেন, জেনে-বুঝে ও ভালো মানের কোম্পানির শেয়ার কিনতে হবে।
মো. ফোরকান উদ্দিন বলেন, আইসিবি দুই হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করে অর্থ উত্তোলন করবে এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক দিক। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, এ টাকা কীভাবে কার কথায় বিনিয়োগ করা হবে এবং কী ধরনের পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিনিয়োগ করবে সেটি বড় একটি ইস্যু হিসেবে কাজ করে। কারণ আগেও তাদের কর্মকাণ্ড সমালোচিত হয়েছে। সেখান থেকে আজও বেরিয়ে আসতে পারেনি। যদি তারা পুঁজিবাজারের বিনিয়োগবান্ধব হিসেবে বিনিয়োগ করে এবং ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থাকে, তাহলে পুঁজিবাজারের জন্য একটি ইতিবাচক দিক হবে নিঃসন্দেহে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী না আসার অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে সুশাসনের অভাব। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর অনেক ভূমিকা রয়েছে। শুধু ব্রোকারেজ হাউজগুলোই নয়, পুঁজিবাজারে যারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে, বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। একটি ব্যাংকের মূলধন প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। সেখানে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের মূলধন মাত্র ২৫ কোটি টাকা। যা ব্যাংকের তুলনায় নগণ্য। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মূলধন ২৫ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে হবে। এতে তারল্য যেমন বাড়বে, তেমনি তাদের জবাবদিহিতাও বাড়বে। শুধু আইপিও আনাই তাদের একমাত্র কাজ নয়। তারা তো পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগকারী হিসেবে কাজ করে। এ কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারলে ভালো পুঁজিবাজারের আশা করা যায়। শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারী দিয়ে বাজার ভালো করা যাবে না। আরেকটি জায়গা বিবেচনা করতে হবে। সেটি হচ্ছে বিমা খাত। বিমা খাতের টাকার মূল জায়গা হচ্ছে ব্যাংকে এফডিআর করা। এ টাকা যদি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যায়, তবে সেটি বাজারের জন্য ইতিবাচক হবে।
বিনিয়োগকারীর উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি কেউ কোনো কোম্পানির শেয়ার ভালো দামে কিনে দীর্ঘমেয়াদি পর্যায়ে রাখে, সেক্ষেত্রে লাভ কম হলেও লোকসান হবে না।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ