Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 9:07 pm

পুঁজিবাজারে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের ইস্যু নিয়ে বিআইসিএমে সেমিনার

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) গবেষণা সেমিনার গত সোমবার ইনস্টিটিউটের মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে ‘ফ্যাক্টর ইনফ্লুয়েন্সিং দ্য ইনডিভিজুয়াল ইনভেস্টরস অব বাংলাদেশ টু অপট অপ ইনভেসমেন্ট ইন সুকুক’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইসিএমের সাবেক সহকারী অধ্যাপক তাসরুমা শারমিন চৌধুরী এবং প্রভাষক এসএম কালবীন ছালিমা।

ইনস্টিটিউটের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মাদ আনোয়ার হোসেন, মালয়েশিয়ার ইসরা রিসার্চ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের গবেষক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ ও এডিএল অ্যাডভাইজরির প্রতিষ্ঠাতা ড. মুফতি ইউসুফ সুলতান। বিআইসিএমের রিসার্চ কনসালট্যান্ট (খণ্ডকালীন) অধ্যাপক ড. সুবর্ন বড়ুয়া সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন।

গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ইসলামী শরিয়াহ পরিপালনকারী ইন্সট্রুমেন্ট খুবই কম। আর্থিক খাতে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা থাকলেও পুঁজিবাজারে স্বল্পসংখ্যক ইন্সট্রুমেন্ট ও মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে সুকুক একেবারেই নতুন একটি বিষয়। বিনিয়োগকারীদের মাঝেও বিষয়টি বেশি পরিচিত নয়। পুঁজিবাজার থেকে সুকুক ইস্যু করে তোলা অর্থের মধ্যে বেশিরভাগই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ রয়েছে। এক্ষেত্রে খুচরা বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ খুবই নগণ্য, যা ২ শতাংশেরও কম। এক্ষেত্রে সুকুক সম্পর্কে খুচরা বিনিয়োগকারীদের মাঝে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে এবং এ খাতে সম্ভাবনার বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের জানা থাকলে খুচরা বিনিয়োগকারীরা এ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন।   

এক্ষেত্রে নতুন এই ইন্সট্রুমেন্ট সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়া সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের জন্য শরিয়াহ অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মাধ্যমে অবশ্যই শরিয়াহ সংক্রান্ত বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই নিশ্চিত করা জরুরি। এসআরআই সুকুক এবং গ্রিন সুকুকসহ অন্যান্য সুকুক ইস্যু করার সময় প্রতিযোগিতামূলক রিটার্ন এবং ট্যাক্স সুবিধা বিবেচনা করা জরুরি।

মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সুকুকে বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিকভাবে অবদান রাখার বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের অনুপ্রাণিত করার জন্য মিডিয়ার মাধ্যমে এ সম্পর্কিত প্রচারের পাশাপাশি প্রেরণামূলক প্রোগ্রামের আয়োজন করা যেতে পারে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে মোহাম্মাদ আনোয়ার হোসেন বলেন, সুকুকের মতো ইন্সট্রুমেন্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ফাইন্যান্সিংয়ের কথা ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকলে তা দূর করতে হবে। তিনি আরও বলেন, নতুন এ ইন্সট্রুমেন্টটি বিনিয়োগকারীদের মাঝে পরিচিত করতে হবে। এক্ষেত্রে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে খুবই স্বল্পসংখ্যক শরিয়াহ পরিপালনকারী ইন্সট্রুমেন্ট রয়েছে উল্লেখ করে মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সুকুক ইস্যুর ক্ষেত্রে খুচরা বাজারকে (রিটেইল মার্কেট) টার্গেট হবে, যদিও এক্ষেত্রে করপোরেট গ্রাহকেরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তিনি খুচরা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করতে বিনিয়োগ মূল্য কমানোর ব্যাপারে পরামর্শ প্রদান করেন।

অন্যদিকে ড. মুফতি ইউসুফ সুলতান বলেন, গোটা আর্থিক খাতে কভিড-১৯ পরবর্তী একপ্রকার স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় সুকুকের মতো নতুন ইন্সট্রুমেন্ট হতে পারে বড় অর্থ সংগ্রহের অন্যতম মাধ্যম। এক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগযোগ্য ইন্সট্রুমেন্ট হিসেবে শুধু সচেতনতা সৃষ্টি করাই যথেষ্ট নয়, বরং প্রতিটি স্টেকহোল্ডারের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারটিও নিশ্চিত করা দরকার।

সভাপতির বক্তব্যে ইনস্টিটিউটের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার বলেন, সুকুক সম্পূর্ণরূপে নতুন একটি ইন্সট্রুমেন্ট। এটি সাধারণ বিনিয়োগাকারীদের মধ্যে খুব বেশি পরিচিত নয়। আলোচ্য গবেষণার মাধ্যমে নতুন এই ইন্সট্রুমেন্টটিতে রিটেইল বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্র উš§ুক্ত হবে। পুঁজিবাজারের একটি নতুন ইন্সট্রুমেন্ট হিসেবে সুকুকের ওপর প্রশিক্ষণ আয়োজন ও গবেষণার পৃষ্ঠপোষকতায় বিআইসিএম অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সেমিনারে বিআইসিএমের পরিচালনক নাজমুছ সালেহীনসহ অনুষদ সদস্যরা, কর্মকর্তা এবং অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।