২০১৬ সালে দেশের পুঁজিবাজারে কয়েকটি ব্যাংকের বিনিয়োগ ও মুনাফা-সংক্রান্ত যে তথ্য গতকালের শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, সেটা আশাব্যঞ্জক। আমাদের ধারণা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অন্য ব্যাংকগুলোও এ থেকে উৎসাহিত হবে। ফলে পুঁজিবাজারে আরও বাড়বে ব্যাংকিং খাতের ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ বিনিয়োগ। অনেকের হয়তো জানা, আমাদের পুঁজিবাজারের ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা মূলত ‘ডে-ট্রেডার’। বাজারের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে তাদের প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অভাবই এর অন্যতম প্রধান কারণ। দেখা যায়, স্বল্পতম সময়ে লাভের আশায় লোকসানে শেয়ার হাতবদল করে পোর্টফোলিওতে পরিবর্তন আনেন অনেকে। ব্যাংকিং খাতের কোম্পানিগুলোয় এসব বিষয় দেখভাল ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য রয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানসম্পন্ন ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ঝুঁকিও কমে আসে অনেক ক্ষেত্রে। পুঁজিবাজারে ব্যাংকের মতো কোম্পানির অংশগ্রহণ বাড়লে ‘ডে-ট্রেডিং’ প্রবণতার প্রভাব কিছুটা হলেও যে কমে আসবে, তাতে সন্দেহ নেই। এর মাধ্যমে বাজারের স্থিতিশীলতা দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে আশা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান এক পরিচালক শেয়ার বিজকে জানিয়েছেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। সাম্প্রতিক তথ্যগুলো তার এ মন্তব্যের যথার্থতা প্রমাণ করে। শুধু বাজার নয়, বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ব্যাংকগুলোর জন্যও এটা আশার সংবাদ। বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ ঝুঁকিও অনেকটা কমে আসবে। এর প্রভাব আবার পড়বে তাদের মুনাফায়। এজন্য সার্বিক দিক বিবেচনায় রেখেই এখানে বিনিয়োগে ব্যাংকগুলোর এগিয়ে আসা উচিত। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সহজ করতে নতুনভাবে গবেষণার ওপরও জোর দিতে পারেন প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিনির্ধারকরা।
বস্তুত বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যাংকিং খাত এখনও শক্তিশালী বলে বিবেচিত। অনেক বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিওতে এমন কোম্পানিই থাকছে পছন্দের তালিকার উপরের দিকে। নিকট অতীতে অবশ্য শেয়ারহোল্ডারদের ‘ভালো’ হারে লভ্যাংশ দিতে দেখা গেছে ব্যাংকগুলোকে। এটাও পোর্টফোলিওতে এ খাতের কোম্পানির উপরের দিকে থাকার কারণ। তারপরও মনে রাখা দরকার, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিসহ কিছু কারণে পরিচালন মুনাফা বাড়ানো এখন কঠিন হয়ে পড়েছে ব্যাংকগুলোর জন্য। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আমরা লক্ষ করেছি, এজন্য শেয়ারহোল্ডাররাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়ে পড়ছেন দ্বিধাগ্রস্ত। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর মুনাফার অবস্থা বিবেচনায় রাখছেন তারা। বিবেচনায় রাখছেন খেলাপি ঋণ-সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে ঝুঁকিমুক্ত অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করলে স্বীয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের ধরে রাখাও ব্যাংকগুলোর জন্য হবে সহজ।
শেয়ারের দাম অনেক কারণে ওঠানামা করে। কিন্তু শুধু অজ্ঞতার কারণে বিনিয়োগকারীরা যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হাতবদল করেন এবং এ কারণে তার দর যদি নি¤œমুখী হতে থাকে, এর প্রভাব পড়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেও। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকেও এ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় নিয়ত। বলা যায়, ব্যাংকিং কোম্পানির সুবিবেচনাপ্রসূত বিনিয়োগ এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতেও হবে সহায়ক। এতে ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি লাভবান হবে তার বিনিয়োগকারীরা। এজন্য আমরা চাইবো, যেসব ব্যাংক এখনও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগবিমুখ রয়েছে, তাদেরও এখানে নিয়ে আসতে নেওয়া হোক পদক্ষেপ। এতে বাজারটিতে ব্যাংকিং খাতের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। বলা বাহুল্য, ব্যাংকিং খাতে এখন অলস অর্থ প্রচুর। ভালো বিনিয়োগ গ্রহীতা যেমন পাওয়া যাচ্ছে না, তেমনি বেগ পেতে হচ্ছে কম ঝুঁকিসম্পন্ন খাত খুঁজে পেতে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ ব্যাংক ও বাজার উভয়ের জন্য লাভজনক হবে কি না, সেটিও ভেবে দেখা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, ব্যাংকিং খাতে অলস অর্থের বোঝা অর্থনীতির স্বার্থেই কমানো দরকার। এ-সংক্রান্ত বিবেচনা যত তাড়াতাড়ি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো যত শিগগির নেওয়া হবে, ততই মঙ্গল।