পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থেকে দেশের কয়েকটি ব্যাংকের আয়ের যে তথ্য গতকালের শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, তাতে মিশ্র অভিজ্ঞতাই হলো। দেখা যাচ্ছে, কিছু ব্যাংক আশাব্যঞ্জক মুনাফা করলেও বেশ কয়েকটি তা পারেনি। যে কয়েকটি মুনাফা অর্জনে এগিয়ে, মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির মাধ্যমে পোর্টফোলিও গঠনই যে সেগুলোর সাফল্য এনে দিয়েছে, এ তথ্যও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। এ থেকে স্পষ্ট, কাক্সিক্ষত মুনাফা অর্জন করতে হলে বিনিয়োগ করতে হবে ভেবেচিন্তে। পোর্টফোলিও গঠন করতে হবে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি দিয়ে। মুনাফায় পিছিয়ে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য এ উদাহরণ হতে পারে শিক্ষণীয়। ভবিষ্যতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন বলেই আশা। ধারণা করি, বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে সর্বোচ্চ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণেও এটা উৎসাহ জোগাবে সংশ্লিষ্টদের।
বস্তুত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজন বাজার সম্পর্কিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। ব্যাংকিং খাতের কোম্পানিগুলোর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণকারী এমন ব্যক্তি যে রয়েছেন, তাতে সন্দেহ নেই। বাজারটি নিয়ে গবেষণা করার মতো উদ্যোগও রয়েছে কোনো কোনো ব্যাংকের। মুনাফা অর্জনে পিছিয়ে থাকা ব্যাংকগুলো যদি এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম জোরদার করে, তাহলে সেগুলোও পেতে পারে ইতিবাচক ফল। এখানে বিনিয়োগ করে আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে মোট মুনাফা বাড়ানো গেলে এর সুবিধা পাবেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররাও। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর অবস্থানও এতে শক্তিশালী হবে। আমাদের পুঁজিবাজারে ব্যাংকিং খাতের কোম্পানির প্রভাব এমনিতেই বেশি। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আরেকটু দূরদর্শিতা ও সুবিবেচনার পরিচয় দিলে এ অবস্থান আরও শক্তিশালী করা সম্ভব।
দেশের ব্যাংকিং খাতে এখন অলস টাকা প্রচুর। বিনিয়োগ করার মতো ভালো ক্ষেত্র ও উপযুক্ত গ্রাহক খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে অনেক ব্যাংকের জন্য। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কিছুটা সুবিধা যে নেওয়া যেতে পারে, সে পরামর্শ অনেক অর্থনীতিবিদ দিয়েছেন এর মধ্যে। আমরা মনে করি, যেসব ব্যাংক বাজারটিতে এখনও বিনিয়োগ করেনি বিদ্যমান বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে এ পরামর্শ তারাও ভেবে দেখবে। এতে পুঁজিবাজারে আরও বেশি অর্থের সমাগম যেমন হবে, তেমনি কমবে ব্যাংকিং খাতে অলস অর্থের চাপ। এটা করা গেলে ব্যাংকিং খাতে আমানতের বিপরীতে মুনাফার যে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা থেকে বেরিয়ে আসারও একটা উপায় সৃষ্টি হবে।
কয়েক দিন আগে প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয়তে আমরা উল্লেখ করেছিলাম, পুঁজিবাজারের ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা মূলত ডে-ট্রেডার। বাজারের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে তাদের প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অভাবই এর অন্যতম কারণ। দেখা যায়, স্বল্পতম সময়ে লাভের আশায় লোকসানে শেয়ার হাতবদল করে পোর্টফোলিওতে পরিবর্তন আনেন অনেকে। এর প্রভাবে অনাকাক্সিক্ষতভাবে বাজার হয়ে ওঠে অস্থিতিশীল। এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে দীর্ঘমেয়াদি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের ওপর জোর দেন বিশ্লেষকরা। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ দুই শর্তই পূরণ করা সম্ভব। এতে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা দীর্ঘস্থায়ী হবে। এর ফলে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি বাছাই ও পোর্টফোলিও গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে অনেকের। বাজার স্থিতিশীল থাকলে বিনিয়োগ ঝুঁকিও কমে আসবে অনেক ক্ষেত্রে। এজন্য সার্বিক বিষয় বিবেচনায় রেখেই বাজারটিতে বিনিয়োগ করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যেই পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো যাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্যোগও প্রত্যাশিত। একটি বিষয় স্পষ্ট মনে রাখা চাই, এতে দু’পক্ষেরই স্বার্থ যুক্ত। ব্যাংকগুলোর যেমন মুনাফা দরকার, পুঁজিবাজারের তেমনি প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ। উভয় পক্ষের স্বার্থ যুক্ত থাকায় এক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন সহজেই সম্ভব বলে আমরা মনে করি।
Add Comment