পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলা ফিরলে ভালো কোম্পানিতে আগ্রহ বাড়বে

২০১৮ সালে পুঁজিবাজারের খারাপ অবস্থার জন্য দায়ী ছিল ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা। এখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজ করার অনেক বিষয় রয়েছে। এখন কথা হচ্ছে, নতুন অর্থমন্ত্রী যদি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাজারে নজর দেয় তাহলে ওই সব খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। ওই সব খাতে শৃঙ্খলা ফিরলে পুঁজিবাজারে মৌলভিত্তির কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। ব্যাংক খাতে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ হয়ে থাকে সেটিও ফিরে আসবে এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যারা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী তারাও বিনিয়োগ করবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাইডাস ইনভেস্টমেন্ট লিমিডেটের সিইও মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিন এবং পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মাহমুদ হোসেন, এফসিএ।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ে নতুন নেতৃত্ব আসায় ধন্যবাদ জানাই। যিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে আসছেন তিনি পুঁজিবাজার সম্পর্কে সবই জানেন। এখন কথা হচ্ছে, যারা পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন, গুরুত্ব দেন, ভালোভাবে নজরদারি করে তাদেরই যেন নীতিনির্ধারক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে যাবে এবং পুঁজিবাজারকে গুরুত্ব সহকারে দেখবে বিনিয়োগকারীরা সেটিই আশা করে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। এটি নিয়ে ২০১৮ সালে বেশি আলোচনা-সমলোচনা হয়েছে। আসলে এখানে কিছু কারণ রয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংক হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি ঋণের উৎস। আর পুঁজিবাজার হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের উৎস। এখানে ব্যাংক স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় ঋণই দিয়ে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিয়ে অনেকে ব্যাংকের টাকা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দিকে সরিয়ে ফেলছে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তেমন কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
মাহমুদ হোসেন বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তনকে স্বাগত জানাই। অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের জন্য সুসংবাদ হচ্ছে হচ্ছে যিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পাচ্ছেন তার পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন করতে হলে মানি মার্কেটের সঙ্গে ক্যাপিটাল মার্কেট উন্নয়ন করতে হবে তিনি সেটি ভালোভাবেই বোঝেন। কারণ সেটা বোঝার যোগ্যতা ও সার্মথ্য তার রয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে তিনি পুঁজিবাজার সম্পর্কে কথা বলেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুঁজিবাজার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে সেটিও নতুন অর্থমন্ত্রী তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারবেন বলে আশা করি। অর্থাৎ পুঁজিবাজার সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতিবাচক ধারণা কেন?। ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে যে খারাপ অবস্থা ছিল এর মূল কারণ ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা। তিনি এ বিষয়গুলো নিয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা করেছেন। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজ করার অনেক বিষয় রয়েছে। এখন কথা হচ্ছে, তিনি যদি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাজারে নজর দেয় তাহলে ওই সব খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। ওই সব খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসলে পুঁজিবাজারে মৌলভিত্তির কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। ব্যাংক খাতে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ হয়ে থাকে সেটিও ফিরে আসবে এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যারা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী তারাও বিনিয়োগ করবে। এটি পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক দিক হবে। অর্থনীতির সব সূচকগুলো যেভাবে এগোচ্ছে ঠিক সেভাবে পুঁজিবাজারও তিনি সামনের দিকে এগিয়ে নেবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
তিনি আরও বলেন ২০১৯ সালে পুঁজিবাজার ভালো না হওয়ার কোনো কারণ নেই। দেশের অর্থনীতির সব সূচকগুলো ইতিবাচক। সরকার যে মেগা প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছিল তা বেশিরভাগই মোটামুটি সম্পন্নের কাছাকাছি। ২০১৮ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা হবে বলে মনে করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ অবস্থানে ছিল তারাও বিনিয়োগে ফিরে আসবে। যদি ২০১৯ সালে পুঁজিবাজার ভালো নয় সেক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল পুঁজিবাজারকে ভালো দেখতে চায় না এবং দেশের অর্থনীতি আরও এগিয়ে যাক সেটিও চায় না।
বিনিয়োগকারীর উদ্দেশ্য বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম কেনার উপযোগী অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংক, বিমা এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোতে। তবে ওই সব কোম্পানিগুলোর শেয়ার কেনার আগে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে এবং যদি বুঝে-শুনে কেনা যায় সেক্ষেত্রে বাৎসরিক ভালো প্রফিট আসবে মনে করি।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০