পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বড় কোম্পানি গ্রামীণফোন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৯৯৭ সালের স্বাধীনতা দিবসে যাত্রা শুরু করে গ্রামীণফোন। বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানটি পল্লী নারীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে গ্রামে সূচনা হয় বলে এর নাম রাখা হয় ‘গ্রামীণফোন’। এর বর্তমান সিইও পিটার বি ফার্বার্গ। হেড অব ট্রান্সফরমেশনের দায়িত্বে রয়েছেন কাজী মাহবুব হোসেন। হেড অব কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স অ্যান্ড সার্ভিসে নিযুক্ত রয়েছেন নাসের ফজলে আজম।

গ্রামীণফোন দেশে প্রথম জিএসএম প্রযুক্তিও চালু করে এবং ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রি-পেইড সেবা নিয়ে আসে। কালক্রমে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী কল সেন্টার, ভয়েস মেইল সার্ভিস, এসএমএসভিত্তিক পুশ-পুল সার্ভিস, এসএমএস ফ্যাক্স ও ডেটা ট্রান্সমিশন সার্ভিস, ডব্লিউএপি, এজ, ইন্টারন্যাশনাল রোমিং, ওয়েলকাম টিউনসহ নানামুখী ভ্যালু-অ্যাডেড সার্ভিস প্রবর্তন করে গ্রামীণফোন। ২০১৩ সালে চালু করে থ্রিজি সেবা।

এখন পর্যন্ত ৯ হাজার সাতশর বেশি বেস স্টেশনের সুবিশাল সেলুলার নেটওয়ার্ক রয়েছে গ্রামীণফোনের। ধীরে ধীরে বাংলাদেশে মোবাইল টু মোবাইল সেবার প্রচলন আরম্ভ করে প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিষ্ঠানের কারণে সাধারণ মানুষের আওতায় চলে আসে মোবাইল ফোন। দেশজুড়ে প্রায় প্রতিটি উপজেলায় গ্রামীণফোনের ১৬০০র বেশি সার্ভিস ডেস্ক রয়েছে। বিভাগীয় সদরে ৯৪টি গ্রামীণফোন সেন্টার রয়েছে। এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যা পাঁচ কোটি ৫০ লাখের বেশি।

গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কগুলো 3‡/ED‡E/‡PRS ঝ সংবলিত। এর নেটওয়ার্কের আওতায় দেশের যে কোনো স্থান থেকে উচ্চগতির ইন্টারনেট ও ডেটাসেবা উপভোগ করা যায়। নেটওয়ার্ক তৈরির কাজে ২৬,৩৮০ কোটি টাকার বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেছে জিপি। বর্তমানে গ্রামীণফোনের প্রায় দুই কোটি ২০ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন। এর পূর্ণকালীন ও খণ্ডকালীন কর্মীর সংখ্যা পাঁচ হাজার। এছাড়া ডিলার, রিটেইলার, স্ক্র্যাচকার্ড বিক্রেতা, সরবরাহকারী, বিক্রেতা, কন্ট্রাকটর প্রভৃতি পেশায় প্রায় তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করেছে গ্রামীণফোন।

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় করদাতা প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্নভাবে প্রায় ৪৩,৮৯০ কোটি টাকা কর প্রদান করেছে। গ্রামীণফোনের ৫৫.৮ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার টেলিনর। ৩২.২ শতাংশ শেয়ার গ্রামীণ টেলিকম করপোরেশনের। অন্যান্য সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাকি ১০ শতাংশের অংশীদার।

গ্রামীণফোন করপোরেট গভর্নেন্সের উন্নয়নে বিশ্বাসী। তাদের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এ খাতে তাদের বিনিয়োগও বেশ। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে গ্রামীণফোনের বোর্ড অব ডিরেক্টরস তাদের প্রত্যেক স্টেকহোল্ডারের সুবিধা-অসুবিধার দিকে লক্ষ্য রাখে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সহজ নীতি ও নিয়ম-কানুনের মাধ্যমে করপোরেট গভর্নেন্স বজায় রাখে ম্যানেজমেন্ট কমিটি। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইন-কানুন ও অভ্যন্তরীণ বিধিনিষেধ মেনে চলে গ্রামীণফোন।

প্রত্যেক গ্রাহককে আশাতীত সেবা দিয়ে তাদের ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনকে আরও সহজ করে দেয়া গ্রামীণফোনের আদর্শ। তাদের মূল্যবোধে রয়েছে সহজকরণ, প্রতিশ্রুতি রাখা, উদ্বুদ্ধ করা ও সম্মান করা। গ্রামীণফোন বিশ্বাস করে, প্রযুক্তির সঠিক ও সময়োপযোগী ব্যবহার একটি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এ বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে তাদের নতুন আহ্বানÑচলো বহুদূর। তাদের ভাষায়, বাংলাদেশের জনসাধারণকে সময়োপযোগী ও আকর্ষণীয় সেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হয়েছে এ সেøাগানে। ‘চলো বহুদূর’ অনুপ্রেরণায় আধুনিক জীবনে ডিজিটাল সম্ভাবনার দুয়ার খোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে গ্রামীণফোন।

গ্রামীণফোন আরও বিশ্বাস করে, উন্নয়ন কোনো গন্তব্য নয়, বরং একটি অগ্রযাত্রা। উন্নয়ন ভালো ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করে। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে গ্রামীণফোনের সম্পর্ক অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে তাদের অংশীদারিত্বের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের বৃহত্তর মঙ্গল স্বার্থে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে চলেছে তারা। তাদের করপোরেট দায়দ্ধতার মধ্যে আছে নিরাপদ মাতৃত্ব ও শিশুর যত্ন প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় সুবিধাবঞ্চিত প্রায় ১৭ লাখ গর্ভবতী মা ও শিশুকে বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেছে। ৩৪৫৮ জনের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছে জিপি। এইডস ও টিকা নিয়ে গণসচেতনতা তৈরি করে। জীবন ও শিক্ষাকে এক করতে প্রায় ৫০০ কমিউনিটি ইনফরমেশন সেন্টার স্থাপন করেছে জিপি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে জরুরি ত্রাণ সরবরাহ করে এই প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ এবং সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রের উন্নয়নে তাদের নিরন্তর সহায়তা তো রয়েছেই।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০