পুঁজিবাজারের স্বার্থে সবার কাজ করতে হবে। সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে বাজারের সুশাসন। তা না হলে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে না। এর জন্য পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে আলোচকদের আলোচনায় এসব কথা ওঠে আসে।
মোশতাক আহমেদ সাদেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক ফজলুল বারী, সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার আনোয়ার ইব্রাহীম এবং মাইডাস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সিইও মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে ফজলুল বারী বলেন, আজ যদি পুঁজিবাজারে সুশাসন থাকত তাহলে বাজারের এ অবস্থা হতো না। বাজারে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, আইসিবিসহ আরও বাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান রয়েছে অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠানে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। আবার বাজার শুধু ইকুইটি-নির্ভর। যেসব কোম্পানি বাজারে রয়েছে তা মানসম্মত নয়। বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। তাই পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বড় একটি ভূমিকা রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ইচ্ছা করলে বাজারকে একটি গতিশীল অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে পারে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এ সিন্ডিকেট প্রতিরোধ না করা যাবে সেক্ষেত্রে বাজারের জন্য এটি আরও বিপদ হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে ব্যাংক খাতে। আর ব্যাংক খাতের সঙ্গে ক্যাপিটাল মার্কেট ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে। আবার পুঁজিবাজার থেকে সবার অর্থ উত্তোলন করার কথা কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজারে বিপরীত চিত্র দেখা যায়। উল্টো সরকার বাজারে শুধু প্রণোদনা দিয়েই যাচ্ছে। এটা আসলে ঠিক নয়।
তিনি আরও বলেন, বড় হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, যারা ভালো উদ্যোক্তা তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে না। আর ঋণখেলাপিদের বারবার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এবং পুরস্কৃত করা হচ্ছে। এখন সেটাই দেখা যাচ্ছে পুঁজিবাজারে ও ব্যাংক খাতে। এভাবে চললে বাজার ও ব্যাংক খাত ভালো করা যাবে না।
অন্যদিকে আনোয়ার ইব্রাহীম বলেন, গত কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সক্রিয় নেই। বাজারে যা দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগই সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং কিছু বড় বিনিয়োগকারী রয়েছেন, তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কারসাজি করে থাকেন। এসব বিনিয়োগকারীর কারণে বাজার নেতিবাচক অবস্থানে দেখা গেছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, এখন থেকে যে কোনো ব্যাংক তার নির্ধারিত সীমার বাইরেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারবে। এর ফলে বাজারে কিছুটা ইতিবাচক দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের পর ইব্রাহিম খালেদ একটি রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন। সেখানে শেয়ার কারসাজিসহ বেশকিছু বিষয় উঠে আসে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল শেয়ার প্লেসমেন্ট বাণিজ্য। ওই রিপোর্টে বলা ছিল ১০০ জনের বেশি প্লেসমেন্ট শেয়ার দিতে পারবেন না। কিন্ত সেটা এখনও মানা হচ্ছে না।
অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিন বলেন, পুঁজিবাজার দেখভাল করার জন্য একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তারা সেভাবে বাজারকে প্রতিপালন করছেন না। কারণ বাজার দীর্ঘদিন ধরে বাজার তলানিতে ছিল। যারা বাজার পরিচালনা করেন তারা কিছুই করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের কারণে বাজার এখন ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে। তাহলে সব বিষয়ে কি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া হবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা এমন একটি বাজার যাই যেখানে সব ধরনের বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করতে পারে এবং বিনিয়োগকারীদের অর্থ নিরাপদে থাকে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ