নিজস্ব প্রতিবেদক: শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের পুঁজিবাজারে বড় উত্থান দেখা দিয়েছে। আগের কার্যদিবসের মতো গতকাল বুধবারও প্রধান পুুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। এতে প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ১৯২ পয়েন্ট। আর লেনদেন হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকার বেশি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় পুঁজিবাজারেও লেনদেন বন্ধ থাকে একাধিক দিন। তবে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলনের তীব্রতায় সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে দেশ ছেড়ে চলে যান।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর মঙ্গলবার দেশের সরকারি-বেসরকারি সব অফিস খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পুঁজিবাজারেও লেনদেন শুরু হয়। হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম কার্যদিবসেই পুঁজিবাজারে উত্থান হয়। সেই সঙ্গে প্রায় এক মাস পর পুঁজিবাজারে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়। এ পরিস্থিতিতে গতকাল পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধানসূচক ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শেষদিকে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাও বাড়ে।
তবে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে ৭১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। লেনদেনের প্রায় সময়জুড়ে দিনের সর্বোচ্চ দামে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের বিপুল ক্রয়াদেশ আসে। বিপরীতে শূন্য হয়ে পড়ে বিক্রয়াদেশের ঘর। এই ৭১ প্রতিষ্ঠানের পাশপাশি আরও শতাধিক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখায়। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২৬৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৪টি প্রতিষ্ঠানের। আর ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৯২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬১৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২১৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮৭ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২২ পয়েন্টে ওঠে এসেছে।
দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭৭৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭৪৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সেই হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ১০ জুলাইয়ের পর ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হলো। এই লেনদেনে বেশি অবদান ছিল ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর। কোম্পানিটির ৫৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ৩৮ কোটি ১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে ছিল রবি।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ছিলÑ সিটি ব্যাংক, ডিবিএইচ ফাইন্যান্স, একমি ল্যাবরেটরিজ, ব্র্যাক ব্যাংক, অগ্নিসিস্টেম, ইবনে সিনা এবং লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৫৪৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হওয়া ২৫৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৫টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা।