গভর্নরের সঙ্গে বিএমবিএ’র বৈঠক

পুঁজিবাজার উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে গতকালের বড় ধসের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) নেতারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হবে।

বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিএমবিএ’র একটি প্রতিনিধিদল গভর্নরের সঙ্গে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকের বিশেষ তহবিল নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এরই মধ্যে ১১ ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। অনেক ব্যাংকই নিজস্ব তহবিল গঠন করে বিনিয়োগ শুরু করেছে। এরপরও পুঁজিবাজার উন্নয়নে গঠনমূলক নতুন কোনো প্রস্তাব থাকলে তা বিবেচনা করে অনুমোদন দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা গেছে, তারল্য সংকটে গত বছরের জানুয়ারি থেকেই উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। অনেকেই এটিকে ২০১০ সালের চেয়েও বড় ধস হিসেবে দেখছেন। সে বাজারে তারল্য সহায়তা দিতে সরকারের ইচ্ছায় উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা দেশের পুঁজিবাজারকে সহায়তা দিতে বিশেষ তহবিল গঠনের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১০ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রত্যেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়।

তহবিল গঠনে রেপোর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এ তহবিলের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশিত পন্থা ও হারে শুধু পুঁজিবাজারে সরাসরি বা সাবসিডিয়ারি এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা যাবে। এসব বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমার মধ্যে ধরা হবে না। কিন্তু এ তহবিলে বা নতুন বিনিয়োগে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত তাগাদা দেওয়া হচ্ছে তহবিল গঠন ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে। এজন্য নিয়মিত ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকেও।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ কম থাকার কারণ হিসেবে জানা গেছে, আগামী ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংকঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ কার্যকর করতে যাচ্ছে সরকার। এ সিদ্ধান্তে সব ব্যাংকেরই মুনাফা কমে যাবে। পতনের বাজারে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি বেড়ে যাবে বলে মনে করে অনেক ব্যাংক। এজন্য অনেকেই সাহস করতে পারছে না নতুন বিনিয়োগে যেতে।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করেছে সরকারি-বেসরকারি ১১ বাণিজ্যিক ব্যাংক। এগুলো হলো: রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, রূপালী, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, এসআইবিএল, সিটি, মার্কেন্টাইল ও ব্যাংক এশিয়া। বাকি ব্যাংকগুলো যেন দ্রুত তহবিল গঠন করে বিনিয়োগ করে, এজন্য তাদের বলা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে।

মুখপাত্র আরও জানান, বর্তমানে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট নেই। ব্যাংকগুলোর এসএলআর বাদ দিয়ে এখন প্রায় এক লাখ ছয় হাজার কোটি টাকার তারল্য রয়েছে। ইচ্ছা করলেই ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারবে।

বৈঠক শেষে বিএমবিএ সভাপতি সাইদুর রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের জানিয়েছে, এরই মধ্যে কয়েকটি ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠন সম্পন্ন করেছে। বাকিরাও যাতে দ্রুত তহবিল গঠন করে বিনিয়োগ শুরু করে, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিবাচক। আশা করা যায়, খুব দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার।

বাজারে ভয়াবহ দরপতন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএমবিএ’র এ নেতা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে, যার প্রভাবে দেশের পুঁজিবাজার খারাপ সময় পার করছে। তবে আশা করছি, বাংলাদেশে এটি মহামারি আকার ধারণ করবে না।

প্রসঙ্গত, ট্রেজারি বন্ড জামানত হিসেবে রেখে বিশেষ তহবিলের অর্থ পাঁচ শতাংশ সুদে ব্যাংকগুলো নিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। অর্থ পরিশোধে সময় পাওয়া যাবে পাঁচ বছর। আর ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ সাত শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দিতে পারবে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানকে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০