নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের পুঁজিবাজার এখন আর ফাটকা বাজার নয় বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
গতকাল শনিবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে এক প্রাক্-বাজেট আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় পুঁজিবাজার ফাটকা বাজারই ছিল। কোনো আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি ছিল না। গত তিন বছর ধরে পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো। এখন আর এটা ফাটকা বাজার নয়। এর ফলাফলও আমরা দেখছি। এখন আমরা রাষ্ট্রায়ত্ত ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ার ছাড়ার কথা বলতে পারি।’
প্রাক্-বাজেট আলোচনায় ইআরএফ সদস্যদের বিভিন্ন বক্তব্যের জের ধরে দেশ থেকে অর্থ পাচার প্রতিরোধ, কালো টাকা সাদা করা, ভ্যাট আদায়, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া ও আসন্ন বাজেটের আকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থ পাচার প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, ‘টাকা পাচার হচ্ছে জানি। টাকা পাচারের বিভিন্ন কারণও রয়েছে। জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে আমরা একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিই, কিন্তু প্রকৃত মূল্য এর চেয়ে অনেক বেশি। এই টাকা পরে কী হয়, সেটা দেশে ব্যবহার করতে পারে না। কারণ এটা কালো টাকা। আমরা চিন্তা করছি, এখন থেকে জমির কোনো নির্ধারিত মূল্য থাকবে না। এর মূল্য বাজারই নির্ধারণ করবে। এটা টাকা পাচার প্রতিরোধে কাজ করবে।’
টাকা পাচার প্রতিরোধ ও রাজস্ব আদায় বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারে। কারণ এ দুই সংস্থার কাছে এ-সংক্রান্ত থাকতে পারে কারা এর সঙ্গে জড়িত। জনৈক ইআরএফ সদস্যের এমন কথার জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রায়ই রিপোর্ট আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু সেভাবে ট্যাক্স জমা পড়ে না। দেয়ার ইজ এ মিসম্যাচ। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর যদি একত্রে কাজ করে তবে ভালো হবে।’
এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো তোমাদের বলেছি। কামিং দেয়ার হোয়াট দে উইল ডু। ছুটির সময় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হবে, তারা ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন বাসভবনের ওপর জরিপ করবে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে যাদের ভালো বাড়ি-গাড়ি আছে তার ওপর ট্যাক্স ধার্য করে নোটিস দেওয়া হবে।’
কালো টাকা সাদা করার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে বাজেটে কিছু থাকবে না। এটা আমার বাজেটে বহুদিন ধরে নেই। এ বিষয়ে আইন করে দেওয়া হয়েছে। কারও যদি আনডিক্লেয়ার মানি থাকে, হি ক্যান ডিক্লেয়ার অ্যানি টাইম পেইং ন্যাসেসারি ফাইন। সেটাই গত তিন-চার বছর ধরে চলছে।’
রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় শ্রমিকদের বেতন কমানো হয়েছে। অনেক শ্রমিক যা আয় করেন, এর কিছু অংশ নিজের কাছে রেখে দেন। আগে সবটাই দেশে পাঠানো হতো। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে আগামীতে প্রবাসীদের কাছ থেকে কোনো চার্জ আদায় করা হবে না।’
এ সময় প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে মুদ্রা বিনিময়ের নির্ধারিত হারের বাড়তি অর্থ প্রদান কিংবা প্রেরিত অর্থের কিছু অংশ পুনরায় বিদেশে ফেরত নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দেন।
আদায়কৃত ভ্যাট সঠিকভাবে সরকারি কোষাগারে জমা হয় কি না এ বিষয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন উপস্থাপন করলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাট আদায় হয়, সব টাকা আসে না। এটা বন্ধ হয়ে যাবে খুব সত্বর। অনলাইন ছাড়াও আমরা ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) চালু করতে যাচ্ছি। আপাতত ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠানে এটি স্থাপন করতে পারব। এতে প্রতিষ্ঠানের সব লেনদেন রেকর্ড হবে। এটাকে কন্ট্রোল করার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।’
রাজস্ব আয়ের ৪০ শতাংশ ভ্যাট থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এবারের বাজেটের আকার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রোববার অনেক কিছুই চূড়ান্ত করা হবে। এবার বাজেটের আকার চার লাখ কোটি টাকার মতো হবে। বর্তমান সরকারের এটাই শেষ কার্যকরী বাজেট। কারণ এরপরের বাজেট হবে নির্বাচনী বাজেট। আমি যদি বেঁচে থাকি তাহলে ওই বাজেটটাও আমিই ঘোষণা করব।’
অন্যান্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষার মান তেমন বাড়েনি। এবার শিক্ষার মানের বিশেষ নজর দেওয়া হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার চলছে, হয়তো আরও কিছু সংস্কার করা হবে। আগামী বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার জন্য কিছু অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমানসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ।