Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:02 pm

পুঁজিবাজার ও আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব প্রকট

পুঁজিবাজারে দুর্নীতি হচ্ছে। একপক্ষ ভালো পারফরম্যান্স করতে না পারায় আরেক পক্ষকে দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ করতে দেখা যাচ্ছে। আসলে এটি পুঁজিবাজারের জন্য কাম্য নয়। বিনিয়োগকারী বাজারে নির্ভয়ে বিনিয়োগ করবে। বাজারসংক্রান্ত সব নিয়মকানুন সঠিকভাবে পরিচালিত হবে, কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হলে দ্রুত সমাধা করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সবার জন্য আইনকানুন সমান থাকবে। এটিকে বলা যায় সুশাসন। গতকাল এনটিভির মার্কেটওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সমকালের বিজনেস এডিটর জাকির হোসেন এবং ইআরএফের সাবেক প্রেসিডেন্ট সুলতান মাহমুদ।
জাকির হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের ভালো-মন্দের ওপর নির্ভর করে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের অর্থনীতির উন্নয়ন। কিন্তু বেশিরভাগ ব্যাংকে তারল্য সংকট এবং এ খাতের আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে খেলাপি ঋণ। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করলে দেখা যায় ব্যাংক খাত ভালো অবস্থানে নেই। আবার সম্প্রতি আর্থিক খাতের একটি প্রতিষ্ঠান অবসায়ন করা হয়েছে। এর ফলে এ প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ আমানতকারীরা সমস্যা পড়েছে তা নয়। কথা হচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানগুলো যদি সতর্ক হয়, সেক্ষেত্রে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাজারে সুশাসনের অনেক অভাব রয়েছে। বিশেষ করে পুঁজিবাজারে দুর্নীতি হচ্ছে, একপক্ষ ভালোভাবে পারফরম্যান্স করতে পারছে না আবার আরেক পক্ষকে দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ করতে দেখা যাচ্ছে। আসলে এটি পুঁজিবাজারের জন্য কাম্য নয়। বিনিয়োগকারী বাজারে নির্ভয়ে বিনিয়োগ করবে এবং আস্থা ফিরে পাবে, বাজারসংক্রান্ত সব নিয়মকানুন সঠিকভাবে পরিচালিত হবে, কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হলে সেটি কীভাবে দ্রুত সমাধা করা যায় সে জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সবার জন্য আইনকানুন সমান থাকবে। এটিকে বলা যায় সুশাসন। কিন্তু এ বিষয়গুলোতে সুশাসনের অনেক অভাব দেখা যাচ্ছে।
সুলতান মাহমুদ বলেন, সুশাসন নিয়ে গত একদশক ধরে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এটি সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। এ বিষয়টি সর্বমহল থেকে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। সুশাসন নিশ্চিত করা কী খুব দুরূহ কাজ। কিন্তু যারা সুশাসন নিশ্চিত বা পরিপালন করবে কিন্তু সেই জায়গায় যদি ঘুণে ধরে বা দুঃশাসন থাকে, তাহলে কীভাবে সুশাসন নিশ্চিত করবে। যদি সুশাসন নিশ্চিত করা না যায় সেক্ষেত্রে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজারসহ আরও যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে সেখানে সুফল পাওয়া যাবে না। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দুর্নীতি চরম পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়ে। যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন খাত থেকে দুর্নীতি করছে তারা মাথা উঁচু করে জনসম্মুক্ষে বীরের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব দুর্নীতিবাজরা কাদের প্রশ্রয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কথা হচ্ছে যাকে যার জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা যদি ব্যক্তিস্বার্থ চিন্তা না করে দেশের স্বার্থ বা দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে দায়িত্ব পালনে উদ্যোগী না হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রণালয় থেকে বলে সুশাসন ফিরিয়ে আনা যাবে না। বাজেট প্রকাশ করার আগে অর্থমন্ত্রী বলেছেন এবার বাজারের অনেক প্রণোদনা থাকবে, বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করবেন না এবং বিনিয়োগকারীরা ভালো প্রফিট করতে পারবে। কিন্তু বাজেট ঘোষণার পরেই শুরু হয় বাজারের ধারাবাহিক পতন। সূচক, টার্নওভার, প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের দর কমতে থাকে। আবার একটার পর একটা কোম্পানির জেট ক্যাটেগরিতে চলে যাচ্ছে। এটি দেখার জন্য তো নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে। তাহলে তারা কী করছে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ