পুঁজিবাজার কি অর্থনীতির বাইরের অংশ?

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারের যে অবস্থা তাতে মনে হয় এটি আসলেই অর্থনীতির বাইরের একটি অংশ। কারণ নীতিনির্ধারকেরা যদি এটিকে অর্থনীতির অংশ মনে করতো তাহলে তো বাজারের এমন আচরণ হওয়ার কথা নয়। বাজার সংক্রান্ত নীতিমালাগুলো যখন আমরা তৈরি করছি এবং এগুলো যখন বাস্তবায়ন করছি তখন এ দুটিকে কতটুক গুরুত্ব দিয়ে গঠন ও বাস্তবায়ন করছি সেটাই আসলে মূল বিষয়। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়গুলো উঠে আসে। সাংবাদিক হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন আইনজীবী ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হাসান মাহমুদ বিপ্লব ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. ফোরকান উদ্দিন, এফসিএ।

হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, বেশকিছু দিন ধরে যে হারে শেয়ারের দর কমছে সে অনুপাতে সূচক পড়ছে না। তার কারণ, জিপি ও স্কয়ার ফার্মার শেয়ারদর ভালো অবস্থানে আছে। গত এক বছরে এ দুটি কোম্পানির শেয়ারদর ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে এবং বর্তমানে বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে। বাজার মূলধনের ভিত্তিতে গ্রামীণফোন প্রথম অবস্থানে এবং স্কয়ার ফার্মাও প্রথম ১০টি কোম্পানির একটি। যেহেতু এ দুটি কোম্পানির শেয়ারদর সেভাবে পড়ছে না তাই সূচকে তেমন বড় ধরনের পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মাঝারি পর্যায়ের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে ভয়াবহ পতন হয়েছে কিন্তু বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারদর খুব বেশি পড়েনি। ফলে অধিকাংশ কোম্পানির দরপতনে সূচক যেভাবে পড়ার কথা ছিল সেভাবে পড়েনি। তবে অধিকাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বড় মূলধনি কোম্পানিতে ছিল না। কারণ দামি বা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর শেয়ারের উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এসব শেয়ার কেনার সামর্থ্য থাকে না। গত বছরের শেষের দিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক খাতের দিকে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। বিশেষ করে সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংকসহ আরও অন্যান্য কিছু ব্যাংকে। সিটি ব্যাংকের দরপতন হয়েছে প্রায় ৪০-৫০ শতাংশের মতো। কিন্তু সূচকে তো আর ৪০-৫০ শতাংশ পতন হয়নি। মাঝারি মানের শেয়ারের ব্যাপক দরপতন হওয়াতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছেন এবার।

মো. ফোরকান উদ্দিন বলেন, বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারের যে আবস্থা তাতে মনে হয় এটি আসলেই অর্থনীতির বাইরের একটি অংশ। কারণ নীতি-নির্ধারকরা যদি এটিকে অর্থনীতির অংশ মনে করতো তাহলে তো বাজারের এমন আচরণ হওয়ার কথা নয়। নীতি-নির্ধারকরা হয়তো বলবেন, বাজারে শেয়ারদর পড়ছে আমরা কি ক্রেন দিয়ে টেনে তুলব? না, কথা আসলে সেটা নয়, কথা হচ্ছে, নীতিমালাগুলো যখন আমরা তৈরি করছি এবং এগুলো যখন বাস্তবায়ন করছি তখন এই দুটিকে কতটুক গুরুত্ব দিয়ে গঠন ও বাস্তবায়ন করছি সেটাই আসলে মূল বিষয়। কিন্তু নীতিনির্ধারণী মহল থেকে এ দুটির কোনোটিই গুরুত্ব দিয়ে করছে না। তিনি বলেন ব্যাংক খাতের ঋণগুলোর সঠিক সদ্ব্যবহার হচ্ছে না। যদি হতো তাহলে খেলাপি ঋণসহ অন্যান্য কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটতো না। তাছাড়া ব্যাংক খাত একটি জিনিস আর এই খাতের একটি ইউনিট আরেকটা জিনিস। এখানে ফারমার্স ব্যাংক একটি ইউনিট ব্যাংক খাতের। এখন কথা হচ্ছে, একটি ইউনিটকে বাঁচাতে গিয়ে সরকারের উচ্চ মহল থেকে শুরু করে নি¤œ মহলের সবাই লাফিয়ে উঠলেন কিন্তু যেখানে পুঁজিবাজার নিজেই একটি খাত সেখানে এই খাত বাঁচাতে কেন তারা লাফিয়ে উঠছেন না, সেটাই আসলে চিন্তার বিষয়। পুঁজিবাজার অবশ্যই অর্থনীতির একটি অংশ। অর্থনীতির সঙ্গে যদি পুঁজিবাজারের মিল না থাকে তাহলে তো বাজার বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কারণ এভাবে চললে একটা সময় মানুষ বাজারবিমুখ হয়ে নিজেই চলে যাবে। এ বিষয়ে আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।

 

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০