Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 3:10 pm

পুঁজিবাজার কি কারও চোখে পড়ে না?

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

দেশের শীর্ষ ব্যক্তিরা বাজার নিয়ে যেসব কথা বলেন তার সঙ্গে কাজের মিল থাকে না। আমাদের সংস্কৃতিটাই এমন যে, যে হুমকি-ধমকি দিতে পারে, তার কাজটিই হয়। অর্থমন্ত্রী বেশ কয়েকবার বলেছেন, পদ্মা সেতুর জন্য বাজারে বন্ড ছাড়া হবে এবং সেখান থেকে অর্থের জোগান দেওয়া হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে তেমন কোনো পদক্ষেপই এ পর্যন্ত দেখা যায়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো বাজারে আনার ব্যাপারেও কোনো অগ্রগতি নেই। অনেক ছোটখাটো বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে সমাধান দেন, অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা পর্যন্ত করে দেন। তাহলে পুঁজিবাজার কি তার চোখে পড়ে না? ৩২ লাখ বিনিয়োগকারী কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা প্রধানমন্ত্রী কি দেখেন না? তার কি উচিত নয় পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসে প্রকৃতভাবে বাজারের সমাধান খুঁজে বের করা? গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের গ্রন্থনা, সম্পাদনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জহিরুল ইসলাম এবং আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হোসেন, এফসিএ।
জহিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান বাজারের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। গত মে মাসের পুরো সময়জুড়েই সূচকের পতন ঘটেছে। টার্নওভারও ৩০০-৪০০ কোটি টাকার আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। এমন অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেনই, সেইসঙ্গে ব্রোকারেজ হাউজগুলোও। অনেক ব্রোকারেজ হাউজের তো এখন টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে ৭০০ বা হাজার কোটি টাকার লেনদেন হলে ব্রোকারেজ হাউজসহ স্টক এক্সচেঞ্জও একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে। কিন্তু সেরকম কোনো চিত্র আমরা পুঁজিবাজারে দেখতে পাচ্ছি না। সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে অনেকভাবে ফান্ড ফ্লোটি সংকুচিত হয়েছে। শেষ জানুয়ারি থেকে বাজারে অর্থ সংকট দেখতে পারছি। মূলত অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) যখন কমানো হলো তখন থেকেই এটির পতন ঘটতে শুরু করে। পরে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারপরও থামানো যাচ্ছে না। আমানত সংগ্রহের জন্য বর্তমানে ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে অনেকেই পুঁজিবাজারে আসা বাদ দিয়ে ব্যাংকের দিকে ঝুঁকছেন। পুঁজিবাজারের এমন অবস্থায় বাজারের জন্য বাজেটে কিছু প্রণোদনা থাকা দরকার। সে লক্ষ্যে আমরা ব্রোকারেজ সংস্থার পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী ও এনবিআরকে দিয়েছি। আমরা লেনদেনের ওপর সরকারকে দশমিক ০৫ শতাংশ ট্যাক্স দিই যা অনেক বেশি। এটিকে দশমিক ০১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছি। আর এটি করা হলে বিনিয়োগকারীসহ ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মধ্যেও ছন্দ ফিরে আসবে এবং টাকাগুলো বাজারেই থাকবে। আর একটি বিষয় হচ্ছে, ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকলে সেটিকে প্রতিবছর রিনিউ করতে হয় না, কিন্তু বিও অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে তা করতে হয়। এতে একজন বিনিয়োগকারীকে প্রতিবছর ৪৫০ টাকা দিতে হয় এবং সেখান থেকে ২০০ টাকা সরকার নিয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই দেশের পুঁজিবাজারের করুণ অবস্থা, তার পরও এই টাকাটি কেন সরকারের নিতে হয়, সেটাই আসলে চিন্তার বিষয়। আর এই আইনটি পরিবর্তনের বিশেষ প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
মাহমুদ হোসেন বলেন, অর্থমন্ত্রী বা দেশের শীর্ষ ব্যক্তিরা বাজার নিয়ে যেসব কথা বলছেন তার সঙ্গে কাজের মিল থাকছে না। লক্ষ করলে দেখবেন, আমাদের দেশের সংস্কৃতিটাই এমন যে, যে হুমকি-ধমকি দিতে পারে, তার কাজটিই হয়। যেমন ব্যাংকারস সংস্থাগুলো অর্থমন্ত্রীর গলা টিপে ধরেছে, যে কারণে এই খাতে অনেক বেশি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। দেশে যার ক্ষমতা বেশি সে তার সুবিধামতো নীতিমালা তৈরি করে নিচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক, কিন্তু তার ইতিবাচক কোনো প্রতিফলন বাজারে দেখতে পাচ্ছি না। অর্থমন্ত্রী বেশ কয়েকবার বলেছেন, পদ্মা সেতুর জন্য বাজারে বন্ড ছাড়া হবে এবং সেখান থেকে অর্থের জোগান দেওয়া হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে তেমন কোনো পদক্ষেপই এ পর্যন্ত আমরা দেখিনি। রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো বাজারে আনার ব্যাপারেও তিনি অনেকবার বলেছেন, কিন্তু তারও কোনো অগ্রগতি আমরা দেখিনি। আর এসব থেকেই বোঝা যায় যে, অর্থমন্ত্রী যা বলেন তা শুধু বলার জন্যই বলেন, করার জন্য বলেন না। তাছাড়া লক্ষ করলে দেখবেন, অনেক ছোট-খাটো বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে বসে সমাধান দেন। আমরা দেখেছি মানুষের অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসার ব্যবস্থা পর্যন্ত করে দিয়েছেন। তাহলে কথা হচ্ছে, পুঁজিবাজার কি তার চোখে পড়ে না? যেখানে ২০১০ সালের বাজার ধসে অনেক মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এখানে ৩২ লাখ বিনিয়োগকারী কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা প্রধানমন্ত্রী কি দেখেন না? তার কি উচিত নয় পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসে প্রকৃতভাবে বাজারের সমাধান খুঁজে বের করা?

শ্রতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম