সূচক ও বাজার মূলধনের উন্নতি

পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীদের

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ:টানা সাত দিনের পতন শেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। বেড়েছে সূচক ও বাজার মূলধন। বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ। গুজবে বাজারের পতন হয়েছিল, সে বিষয়টিও পরিষ্কার হয়েছে। এর জের ধরে পুঁজিবাজার আবার ঘুঁরে দাঁড়াবে, এমন প্রত্যাশা করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। একই সঙ্গে বাজারসংশ্লিষ্টরাও মনে করছেন ইতিবাচক ধারায় ফিরবে পুঁজিবাজার।

গতকালের আগে টানা সাত কার্যদিবস নিম্নমুখী ছিল পুঁজিবাজারের সূচক। বাজারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ না থাকা, বিএসইসির চেয়ারম্যান পদত্যাগে যাচ্ছেন, পুঁজিবাজারের স্বার্থে সরকারের দেয়া ৯০০ কোটি টাকার তহাবল ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছেÑএমন সব গুজবে বিনিয়োগকারীদের মাঝে ভীতি তৈরি হয়। ফলে বাজারে টানা পতন দেখা যায়। পরবর্তীকালে বিষয়টি নিয়ে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএসইসি।

বৈঠক শেষে শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একটি মহল পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করার জন্য গুজব ছড়াচ্ছে। এই বিষয়টিও তদন্ত করা হচ্ছে।’

বিনিয়োগকারীদের অভয় দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই। পুঁজিবাজারের জন্য আমরা কাজ করছি, চেয়ারম্যানও কাজ করছেন। কোনো ব্যক্তি বা কোনো গোষ্ঠী যদি পুঁজিবাজারের কারসাজি করতে চায় বা ক্ষতি করতে চায়, তা প্রতিরোধে আমরা এখন অনেক শক্তিশালী।’

তিনি জানান, তারা জানতে পেরেছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন এমন গুজব ছড়ানো হয়েছে, কিন্তু এর কেনো ভিত্তি নেই। মহলটি ছাড়িয়েছে যে, বিএসইসি চেয়ারম্যানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর করা হবে।

শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়ে আমাদের মতবিরোধ আছে। অবণ্টিত লভ্যাংশ ও আমানতের মধ্যে যে পার্থক্য, সেটি নিয়েও আমাদের মতপার্থক্য আছে। আমাদের চেয়ারম্যান যদি ওখানে যান, তাহলে এটা তো আমাদের আর ব্যাখ্যা করে বলতে হবে না। তাহলে তো সেটা পুঁজিবাজারের জন্য আরও ভালো হবে, আরও সৌভাগ্যের বিষয় হবে। এটা তো লুকোচুরির কিছু নয়। এটা নিয়ে গুজব ছড়ানোর কিছু নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য ৯০০ কোটি টাকার যে তহবিল করা হয়েছিল, সেটির মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মূলত এরপর গতকাল পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ায়।’

গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক বৃদ্ধি পেতে দেখা যায় ৫৫ পয়েন্ট। দিন শেষে সূচকের অবস্থান হয় সাত হাজার ৭৬ পয়েন্টে। একইভাবে বাজার মূলধন বৃদ্ধি পায় তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। এর আগে সাত দিনের পতনে বাজার মূলধন হ্রাস পায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে সূচক হ্রাস পায় ৩৫০ পয়েন্টের বেশি।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে মো. আলমগীর হোসেন নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, গত কয়েক দিনের পতনে আমাদের বেশ লোকসান হয়েছে। আজ (গতকাল) বাজার ঘুরে দাঁড়ানোয় আমরা আবারও আশাবাদী হয়ে উঠেছি। বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগের বিষয়টি গুজবসহ অন্যান্য সব গুজবের বিষয়টি নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, এটা আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। মূলত তাদের এই বার্তার কারণে আজ (গতকাল) বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’

তিনি বলেন, আশা করছি পুঁজিবাজার আবার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল থাকবে। যদি এ ধারাবাহিকতা না থাকে, তাহলে আমাদের তা ভালো হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে সূচকের হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা সহজে বিচলতি হয়ে পড়েন। ফলে পেনিক সেল বেড়ে যায়। তাই পতন নেমে আসে। বর্তমানে বাজার পরিস্থিতে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

একই বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, বাজারে এখন বেশিরভাগ শেয়ারই ক্রয়যোগ্য। তারপর বাজারের পতন একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। এর সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের মানিয়ে নেয়া জরুরি। বিনিয়োগকারীরা যদি কোনো কারণে ভীত হয়ে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন, তাহলে এমনিতেই পতন নেমে আসে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০