Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 10:24 am

পুঁজিবাজার চাঙা না হতেই আলোচনায় মার্জিন ঋণ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পুঁজিবাজার চাঙা অবস্থায় ফিরে এসেছে। সে কারণে বাড়ছে সব ধরনের শেয়ারদর। ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় রয়েছে সূচক। বাড়ছে বাজার মূলধনও। এর সূত্র ধরেই বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। কিন্তু বাজারে ফিরেই মার্জিন ঋণ নিয়ে ব্যবসা করার পরিকল্পনা করছেন কিছু বিনিয়োগকারী, যা তাদের জন্য কল্যাণকর নাও হতে পারে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

এ ধরনের কয়েকজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রয়োজনে নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে নির্দিষ্ট অর্থ জমা করে তার বিপরীতে ঋণ নিয়ে নতুন করে শেয়ার ব্যবসা করতে চান তারা। তবে বিষয়টিতে দ্বিমত পোষণ করেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, মার্জিন ঋণের ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের অনেক বেশি সতর্ক থাকা দরকার। কারণ কোনো কারণে বাজারে ধস নামলে কিংবা টানা পতন দেখা গেলে মার্জিনধারী বিনিয়োগকারীই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। ২০১০ সালের ধসে যারা ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছেন, তাদের মধ্যে যেসব বিনিয়োগকারী মার্জিণ ঋণ নিয়েছেন, তারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন।

পুঁজিবাজারে পতনের জের ধরে লোকসানে রয়েছেন অধিকাংশ বিনিয়োগকারী। এদিকে এখন বাজারে অধিকাংশ শেয়ার ও ইউনিট ক্রয়যোগ্য অবস্থানে রয়েছে। এই অবস্থাকে বিনিয়োগের যোগ্য সময় মনে করেই ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে চাচ্ছেন তারা।

ঋণ না নেওয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে মার্জিন ঋণের অনুপাত দশমিক পাঁচ। অর্থাৎ এক লাখ টাকা থাকলে ওই বিনিয়োগকারীকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হচ্ছে। তবে ঋণপ্রবাহ নির্ভর করছে হাউস কর্তৃপক্ষের ইচ্ছার ওপর। কোনো কোনো হাউসে ঋণের হার শূন্য দশমিক ২৫ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এক লাখ টাকায় একজন বিনিয়োগকারী ২৫ হাজার টাকা ঋণ পাবেন। আর এ ঋণের বিপরীতে সুদ গুনতে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৮ শতাংশ হারে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে ঋণের অনুপাত বিভিন্ন রকমের, যেখানে সুদ হিসাবে নেওয়া হচ্ছে ১১ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে তিন শতাংশ সার্ভিস চার্জ। অর্থাৎ যিনি ১১ শতাংশ সুদে ঋণ নিচ্ছেন, তার সুদ (সার্ভিস চার্জসহ) গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ১৪ শতাংশ। আর যিনি ১৫ শতাংশ হারে ঋণ নিচ্ছেন, তার সুদ হচ্ছে ১৮ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের মতে, এত উচ্চমূল্যে ঋণ নিয়ে তা দিয়ে ব্যবসা করে লাভবান হওয়া কষ্টকর। তাই বিনিয়োগকারীদের নিজের টাকায় ব্যবসায় করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ঋণ নেওয়ার বেলায় কিছুদিন আগেও বিনিয়োগকারীরা খুবই হিসাবি ছিলেন। কিন্তু পুঁজিবাজার একটু ঘুরে দঁড়াতেই তারা মার্জিন ঋণ নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কিন্তু আমরা এখনও তাদের ঋণ নেওয়া থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ ঋণ দেওয়ার পর কোনো কারণে যদি বাজারচিত্র বদলে যায় এবং বিনিয়োগকারীরা ঋণ শোধ করতে না পারেন, তাহলে মালিকপক্ষ আমাদের চাপের মধ্যে রাখেন। তাই আমরা ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না।

তিনি বলেন, এখন বাজারের যে সার্বিক পরিস্থিতি তাতে মার্জিনধারীরা কতটুকু লাভবান হতে পারবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সে কারণে আমরা তাদের উৎসাহিত করছি না।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, মার্জিন ঋণে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে চড়া সুদ আদায় করা হয়। তাই স্বাভাবিকভাবে বিনিয়োগকারীদের উচিত হবে যতটা সম্ভব ঋণ এড়িয়ে চলা। কারণ ঋণ নিয়ে ব্যবসা করার ঝুঁকি বেশি। এই ঝুঁকি এড়িয়ে চলার জন্যই তাদের মার্জিন ঋণ এড়িয়ে চলা উচিত। কিন্তু এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাদের যদি ঋণ শোধ করার ক্ষমতা থাকে, তাহলে তারা ঋণ নিতেই পারেন। সাধারণত বড় বড় বিনিয়োগকারীই এ ধরনের ঋণ বেশি নেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের শুরুর দিকে বিনিয়োগকারীরা মার্জিন ঋণে কিছুটা আগ্রহী ছিলেন। পরে বাজার পরিস্থিতি মন্দা হওয়ার কারণে তারা সতর্ক অবস্থান নেন। অন্যদিকে হাউসগুলোও ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে হিসাবি হয়। গ্রাহক যাতে বিপদে না পড়ে, সেজন্য অনেক হাউস ঋণ দেওয়া এখনও বন্ধ রেখেছে।