Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:45 am

পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনে কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করতে হবে

মানি মার্কেটের কাজ স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগ, আর পুঁজিবাজারের কাজ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা। কিন্তু ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগই দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করছে। কারণ বিনিয়োগকারীরা এখান থেকে ঋণ নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ফলে তারা পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করতে আসেন না। তাই কোম্পানিগুলোকে ব্যাংক থেকে সম্পূর্ণ অর্থ না নিয়ে অবশ্যই ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে কিছু অর্থ উত্তোলন করতে বাধ্য করতে হবে। যদি এ রকম একটি নিয়ম করা যায়, তাহলে নামহীন কোম্পানির বাজারে আসা কমে যাবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।   

খুজিস্তা নূর-ই-নাহারিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী এবং এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন।

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, পুঁজিবাজারে আস্থাহীনতা রয়েছে, এটা অস্বীকার করার কারণ নেই। গত কয়েক বছর ধরে যেসব কোম্পানি বাজারে এসেছে তার বেশিরভাগই দুর্বল মৌলভিত্তির। এতে বোঝা যাচ্ছে, ডিএসই ও বিএসইসি ভালো কোম্পানি অনুমোদন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ওইসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীর অনেক লোকসান হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেওয়া। তাদের এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। কারণ বাজারকে শক্তিশালী করতে হলে বাজারে ভালো কোম্পানি আনার কোনো বিকল্প পথ নেই। মানসম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে জোর দিতে হবে। আর যারা বাজারে কারসাজি করে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। এসব ব্যক্তি বাজারে সক্রিয় থাকলে কখনই বাজার ভালো হবে না এবং বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরবে না। ফলে স্থিতিশীল হবে না পুঁজিবাজার।

তিনি আরও বলেন, বাজারের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে ডিএসই ও বিএসইসি। এখন যদি এ দুটি সংস্থার মধ্যে কোনো কাজে মিল না থাকে এবং একসঙ্গে কাজ করতে না পারে, তাহলে বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে এবং বাজারে আস্থা কমে যাবে।

মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, পুঁজিবাজারে এ অবস্থার মূল কারণ হচ্ছে আস্থাহীনতা। শুধু পুঁজিবাজারে আস্থাহীনতা রয়েছে তা নয়, এটি এখন সর্বক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। বাজারে একটি আইপিও আসার পর কেন ওই কোম্পানিকে ছয় থেকে এক বছরের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে কী করে বাজারে এসব কোম্পানি আসল। এছাড়া আস্থাহীনতার আরও অনেক বিষয় রয়েছে। এ বিষয়গুলো যদি সমাধা করা যায় এমনিতেই বাজারে আস্থা আসবে। এখন যদি ভালোমানের একটি কোম্পানি আসে দেখা যাবে দ্বিগুণ বিনিয়োগকারী বাজারে আসছে, যেটা অতীতেও দেখা গেছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, মানি মার্কেটের কাজ স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগ আর ক্যাপিটাল মার্কেটের কাজ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা। কিন্তু ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগই দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করছে। কারণ বিনিয়োগকারীরা এখান থেকে ঋণ নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ফলে তারা ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে অর্থ উত্তোলন করতে আসেন না। আমার পরামর্শ হচ্ছে, কোম্পানিগুলোকে ব্যাংক থেকে সম্পূর্ণ অর্থ না নিয়ে অবশ্যই ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে কিছু অর্থ উত্তোলন করতে হবে। যদি এ রকম একটি নিয়ম করা যায়, সেক্ষেত্রে নামহীন কোম্পানি বাজারে আসা কমে যাবে।   

তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে শেয়ারদর যখন নি¤œগতির দিকে থাকে তখনই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। আসলে বাজারে শেয়ার দর উঠা-নামা করবে এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আর বাজারে এ রকম অবস্থা হবেই। আবার এ অবস্থা থেকে ঘুরেও দাঁড়ায়। এটি বিশ্বের সব পুঁজিবাজারেই হচ্ছে। কিন্তু এ সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থা কী ভূমিকা পালন করছে, সেটাই দেখার বিষয়। তবে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাজারের এ অবস্থায় আইসিবির তেমন ভূমিকা দেখা যায়নি। মিউচুয়াল ফান্ড ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তেমন ভূমিকা পালন করেনি। এসব প্রতিষ্ঠান যখন বাজারে সক্রিয় হবে তখন বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ