Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 2:01 pm

পুঁজিবাজার ধুঁকে ধুঁকে চলছে

দীর্ঘদিন থেকে পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো নেই। বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া এ সময়ে একযোগে কমছে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর। ফলে বাজার তার স্বরূপে ফিরতে পারছে না। এ বাজার চলছে ধুঁকে ধুঁকে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানের আলোচকদের আলোচনায় এসব কথা ওঠে আসে। খুজিস্তা নুর-ই-নাহারিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক ফজলুল বারী এবং এএফপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম।

ফজলুল বারী বলেন, অনেক দিন ধরেই পুঁজিবাজার ধুঁকে ধুঁকে চলছে। বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগকারী উদ্বিগ্ন হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। কারণ এসব বিনিয়োগকারী বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত। যদি তাদের পোর্টফোলিও দেখেন সেখানে দেখা যাবে দু-একজন ছাড়া সবাইর পোর্টফোলিও নেগেটিফ। তাদের বিনিয়োগ করা অর্থ চলে যাচ্ছে। এমনকি ধার করা অর্থও চলে যাচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতে সূচক ছয় হাজারের উপরে ছিল। এখন সাড়ে চার হাজারে নেমে এসেছে। এমন কী হলো সূচক ছয় হাজার থেকে সাড়ে চার হাজারে নেমে এলো। এভাবে বাজার চলতে পারে না। বাজার তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। তবে এ অবস্থা থেকেও বাজার ভালো করা এখনও সুযোগ রয়েছে। যদি বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনুন, বাজারের কয়েকজন দুষ্টুচক্রদের কঠোর শাস্তি দেন, যে অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে সেগুলো আনার চেষ্টা করুন এবং বাজারে অর্থপ্রবাহ বাড়ান, তাহলেই দেখবেন বাজার স্থিতিশীল অবস্থানে চলে আসবে। শুধু তাত্ত্বিক কথাবার্তা বলে বাজার ভালো করা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। কিন্তু আজ তারা পুঁজি সর্বহারা। তাদের বাঁচাতে হবে। সেক্ষেত্রে কিছু প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। যাতে করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। এছাড়া বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে। ২০১০ সালের পর বাজারে প্রায় ১০০টি কোম্পানি এসেছে। এ হিসেবে বাজারের সূচক ১০ হাজার হওয়ার কথা। কিন্তু তার চিত্র বিপরীত দেখা যাচ্ছে। আবার যখন কোনো কোম্পানি জেড ক্যাটেগরিতে নেওয়া হয়। কী কারণে কোম্পানিটি জেড ক্যাটেগরিতে দেওয়া হলো সে ব্যাপারে বিএসইসি ও ডিএসই তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয় হয়নি। শুধু ক্যাটেগরি পরিবর্তন করে দায় সারা বিচার করেছেন। ফলে তাদের বাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যেসব কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে লভ্যাংশ দিচ্ছে এবং গ্রোথ ভালো হচ্ছে, তাদের পুরস্কৃত করেন। আর যারা খারাপ অবস্থায় আছে, তাদের শাস্তি দেন। কেন তাদের এ অবস্থা আজ।  

শফিকুল আলম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দেশের অর্থনীতির সূচকগুলো তেমন ভালো নয়। একমাত্র রেমিট্যান্স ছাড়া সবাই নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। এর একটা প্রতিফলন পুঁজিবাজারে দেখা যাচ্ছে। আবার সরকারের তথ্য অনুযায়ী জিডিপির গ্রোথ আট দশমিক দুই শতাংশ। কিন্তু এর প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে না। গত ১০ বছরে যেসব কোম্পানি বাজারে আসছে, এসব কোম্পানির মধ্যে অনেক কোম্পানির শেয়ারদর ফেসভ্যালুর নিচে রয়েছে। আসলে এসব কোম্পানিতে বড় ধরনের কারসাজি করা হয়েছে। এখন এগুলো বাজারের জন্য একটি নেতিবাচক অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এখন দ্রুত কিছু ভালো কোম্পানি বাজারে আনা দরকার। 

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ