Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 8:52 pm

পুঁজিবাজার পতনের কারণ খুঁজছেন বিনিয়োগকারীরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন থেকে নিম্নমুখী রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। মুদ্রানীতি এবং ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীন ও ভারতের প্রতিযোগিতা ইস্যুসহ বিভিন্ন কারণে টালমাটাল ছিল বাজার। মুদ্রানীতির জটিলতা কেটে গেছে। চীনকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার মধ্য দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান হয়েছে। কিন্তু তারপরও স্বাভাবিক হচ্ছে না পুঁজিবাজার। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা খুঁজে পাচ্ছেন না এই দরপতনের কারণ।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে বাজার পতনের কারণ নিয়ে আলোচনায় মগ্ন ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এখন ঠিক কী কারণে সূচক নিম্নমুখী হচ্ছে তা বলতে পারছেন না কেউই। প্রকৃতপক্ষে এই বাজার কিছু লোকের জিম্মায় রয়েছে। তারাই বিভিন্ন ইস্যু সামনে রেখে কৃত্রিমভাবে সূচকের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটায়। আর এই ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
এ প্রসঙ্গে রাসেল আহমেদ নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, চীন আর ভারত কারা কৌশলগত বিনিয়োগকারী হবে এই ইস্যুতে বাজার নিম্নমুখী ছিল। কারণ সবার মধ্যে ভয় ছিল চীন কৌশলগত বিনিয়োগকারী না হলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এখন এ সমস্যার সমাধান হয়েছে। কিন্তু তারপরও বাজার স্বাভাবিক চেহারায় ফিরছে না। এটা প্রত্যাশা ছিল না আমাদের।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, চলতি বছর ডিএসইর প্রধান সূচকের পতন হয়েছে ৫৬১ পয়েন্ট। গত বছরের শেষ দিনে ডিএসইর সূচক ছিল ছয় হাজার ২৪৪ পয়েন্ট, গতকাল যা স্থির হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৮৩ পয়েন্টে। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, টানা দরপতনে ইতোমধ্যে লোকসানের মুখে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। তারা জানান, এ পরিস্থিতি বিরাজমান থাকলে অচিরেই তাদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। সে জন্য বাজারে কোনো ধরনের কারসাজি হচ্ছে কিনা, সেদিকে নজরদারি বাড়ানোর কথা বলছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন নামে এক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিজকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো না থাকায় তিনি ব্যাংকে টাকা রেখেছিলেন। কিন্তু গত বছরের মাঝামাঝি পুঁজিবাজার ভালো হলে টাকা ব্যাংক থেকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসেন। প্রথম কয়েক দিন ভালো লাভ করলেও সম্প্রতি তার পোর্টফোলিওর অবস্থা বদলে গেছে। ইতোমধ্যে ২৫ লাখ টাকার পুঁজি নেমে এসেছে ১৮ লাখ টাকায়। জানা যায়, বিনিয়োগকারী জাহিদের মতো অবস্থা হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর। তবে বাজার-সংশ্লিষ্টরা বিষয়টিকে স্বাভাবিক মনে করছেন। তারা বিনিয়োগকারীদের যে কোনো পরিস্থিতি মানিয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের ভয়ের কিছু আছে বলে মনে হয় না। পুঁজিবাজারে শেয়ারদর বাড়বে-কমবে এটা স্বাভাবিক। বিনিয়োগকারীদের উচিত সব পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলা শিখতে হবে। অল্পতে ভয় পেলে চলবে না।
গত বছরের মাঝামাঝি পুঁজিবাজার বেশ ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ব্যাংক-বিমা-আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বাড়ছিল সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে। ফলে নতুন বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হন। বাড়তে থাকে বিও অ্যাকাউন্ট। আলাপ করে জানা যায়, এসব বিনিয়োগকারী প্রধান উদ্দেশ্য সেকেন্ডারি মার্কেট। সে জন্য তারা প্রাইমারি মার্কেটের চেয়ে সেকেন্ডারি মার্কেটে ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু হঠাৎ করেই বাজারের চেহারা বদলে যায়। ফলে নতুন-পুরোনো সব বিনিয়োগকারীদের দুর্ভোগ বাড়তে থাকে।