পুঁজিবাজার বা শেয়ার ব্যবসা বলতে আমরা কী বুঝি?

পুঁজিবাজার জিজ্ঞাসা পর্ব-৩

মো. শফীকুল আলম

এসিএস, এফসিএ, এফসিএমএ

(পূর্ব প্রকাশের পর)

প্রথম ধরন: (ক). দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ

দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের লক্ষ্যে আমরা নিম্নলিখিত বিষয়বস্তুগুলো খুবই যত্নসহকারে বিবেচনা করবো :

কোনো স্কিপ্টে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের আগে সে প্রতিষ্ঠানের ভালো-মন্দ দিকগুলো পরখ করতে হবে। যেমন

¡ উক্ত শেয়ার বা কোম্পানিটির ব্যবসার ধরন

¡ কোম্পানিটির মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন

¡ উক্ত কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে কি না

¡ উক্ত কোম্পানির স্ট্যাটুটরি অডিটর বা নিরীক্ষণ করা

¡ কোম্পানির ব্যবসার ধরন বা উৎপাদিত পণ্য সরকারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না

¡ উৎপাদিত পণ্য দেশি বা রফতানির জন্য কোনো বিশেষ সুযোগ রয়েছে কি না

¡ আর্থিক বছর শেষের তারিখ

¡ অনুমোদিত মূলধন

¡ পরিশোধিত মূলধন

¡ পূর্ববর্তী অন্তত পাঁচটি এজিএমের তারিখ

¡ পূর্ববর্তী অন্তত পাঁচ বছরের লভ্যাংশ ঘোষণা ও পরিশোধের ধরন

¡ চলতি বছরের Quarterly প্রকাশিত আর্থিক অবস্থা  (NAV, NOCF etc.)

¡ রাইট ইস্যু (যদি থাকে)

¡ রিজার্ভ এবং সারপ্লাস

¡ Basic & diluted,EPS Ges PE এবং PE অনুপাত

এখানে কিছু প্যারামিটারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করতে হবে যে কী ধরনের শেয়ারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা উচিত :

¡ কোম্পানিটি যে পণ্য নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে, সেই ইন্ডাস্ট্রিতে ওই কোম্পানির মার্কেট শেয়ার কত

¡ সামগ্রিক মার্কেট Price Earnings Ratio-এর সঙ্গে এ কোম্পানির  P/E Ratio-এর তুলনা

¡ Dividend Payout trends প্রভৃতি

¡ ওই কোম্পানির উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব খোঁজ নেওয়া

ব্লু চিপ (Blue-chip) শেয়ার বলতে বোঝায় এমন শেয়ারকে যার নিম্ন লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা জরুরি:

বড় পরিশোধিত মূলধনে কোম্পানির শেয়ার

বড় মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন

মার্কেট লিডার অথবা মার্কেট শেয়ারের দিক থেকে প্রথমে তিনের মধ্যে অবস্থান

নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করে এমন কোম্পানির শেয়ার ও লভ্যাংশ প্রদানের শতাংশের দিক থেকে growing treand.

তাই আমাদের পরামর্শ, দেখে-শুনে উপরোল্লিখিত মানদণ্ডগুলো বিবেচনা করে সার্বিক অর্থেই এ ধরনের Blue-chip শেয়ারে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।

খ) মধ্যমমেয়াদি বিনিয়োগ

মধ্যমমেয়াদে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আগে

যেসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে,

সেগুলো হলো :

¡ কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনার আগে সে প্রতিষ্ঠানের উপরোল্লিখিত মানদণ্ডগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে, সম্ভব হলে ওই প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর ডাইরেক্টরদের সম্পর্কে যতটুকু জানা সম্ভব জেনে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন

¡ ওই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ওঠানামার প্রতি খেয়াল রাখুন এবং অন্তত গত এক বছরের চার্ট দেখে হিসাব-নিকাশ করুন যে, এ ধরনের শেয়ার অন্তত এক বছর থেকে দুবছর সময়ের জন্য বিনিয়োগ করা আসলেই নিরাপদ কি না

¡ দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার দিকে সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখুন

¡ ওই কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে কি না

¡ ওই কোম্পানির স্টাটুটরি অডিটর বা নিরীক্ষা করা

¡ বার্ষিক সাধারণ সভার আগে অথবা পরে ওই শেয়ারের গতিবিধি দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন

¡ সব সময় দৃষ্টি রাখুন এমন সব শেয়ারে, যার মৌল ভিত্তি অপেক্ষাকৃত ভালো এবং এটির স্বীকৃত কোনো ভালো খবর রয়েছে

¡ মধ্যম মেয়াদে বিনিয়োগের আগে ওই শেয়ারের নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লোর খবর নিন

গ) স্বল্পমেয়াদি বা অতিস্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ

ব্যক্তিগতভাবে আমি এত স্বল্প সময়ের জন্য বিনিয়োগকে খুব বেশি সমর্থন না করলেও এটিও একটি সর্বজন স্বীকৃত বিনিয়োগ পদ্ধতি। সাধারণত তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময়কাল ধরে বিনিয়োগ করাকেই স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ বলা হয়। আর তিন মাসের কম সময় ধরে বিনিয়োগকে অতিস্বল্পবিনিয়োগ বলা যেতে পারে। তবে একদম নতুন বিনিয়োগকারীদের এ ধরনের অতিস্বল্পবিনিয়োগে যাওয়া একেবারেই ঠিক হবে না

পুঁজিবাজার বা শেয়ার মার্কেট থেকে মুনাফার উপায়

একটি প্রারম্ভিক পাবলিক অফার (আইপিও) হলো প্রথমবারের মতো যে কোনো প্রাইভেট কোম্পানির শেয়ার  জনসাধারণের কাছে সরবরাহ করা হয়। আইপিওর মাধ্যম কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা দ্বারা প্রসারিত করার জন্য মূলধন চাইতে পারে। একটি আইপিওতে ইস্যুয়ার একটি আন্ডাররাইটিং ফার্মের সহায়তা গ্রহণ করে, যে কোনো ধরনের সিকিউরিটির জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিষয়, সর্বোত্তম অফারের মূল্য, ইস্যু করতে ইচ্ছুক শেয়ারের পরিমাণ এবং এটি বাজারে আনার সময় নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।

প্রারম্ভিক পাবলিক অফার বা আইপিও হলো এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে কোনো বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান নতুন করে সর্বসাধারণের মধ্য হতে ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের খুঁজে বের করতে পারে। ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ব্যাংকঋণ অনেক ক্ষেত্রেই বেশি খরুচে হয়ে যেতে পারে। তাই আইপিও’র মাধ্যমে যেসব কোম্পানির মূলধন প্রয়োজন, তারা যেমন অল্প খরচে ফান্ড পেতে পারে, একই সঙ্গে যাদের কাছে বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ আছে, তারাও সঠিক বিনিয়োগেরে জায়গা খুঁজে পেতে পারে।

আইপিও হতে মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে : আইপিও (ওচঙ) মানে হচ্ছে প্রতিনিয়তই অনেক নতুন কোম্পানি আমাদের শেয়ারবাজারে যুক্ত হচ্ছে। প্রাথমিক শেয়ার পাওয়ার জন্য আইপিও ফরম পূরণ করে নির্দিষ্ট টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে অথবা ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে আইপিও লটারিতে অংশ নিতে পারেন। লটারি পেলে এক লট শেয়ার আপনার বিও অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাবে। এ শেয়ার যৌক্তিক মূল্যে বিক্রি করে আপনি মুনাফা করতে পারেন।

নগদ লভ্যাংশ : কোম্পানিগুলো এজিএম করে শেয়ারের ওপর নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে থাকে। আপনি ওই শেয়ার কিনে থাকলে এবং বুক ক্লোজারের দিনে শেয়ার রেজিস্টারে যদি আপনার নাম তালিকাভুক্ত থাকে, তবে কোম্পানি ঘোষিত নগদ লভ্যাংশ পেতে পারেন।

বোনাস শেয়ার প্রাপ্তি : কোনো কোনো কোম্পানি কখনও কখনও নগদ লভ্যাংশের পরিবর্তে বোনাস শেয়ার ইস্যু করে থাকে। আপনি ওই বোনাস শেয়ার বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন।

মূলধনি আয় : কম দামে শেয়ার কিনে বেশি দামে বিক্রি করে আপনি লাভবান হতে পারেন। এর জন্য আপনাকে শেয়ার বা পুঁজিবাজার সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান লাভ করতে হবে।

কোম্পানির মালিকানা : যে কোম্পানির যতটুকু শেয়ার আপনি কিনেছেন, ওই কোম্পানির ততটুকু সম্পদের মালিক আপনি। কোম্পানির নির্দিষ্ট অংশের মালিক হিসেবে সাধারণ বার্ষিক সভায় যোগদান ও ভোট দেওয়ার অধিকারী আপনি। এ শেয়ার ব্যাংকে জমা রেখে এর বিপরীতে বন্ধক রেখে প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে ঋণও নিতে পারেন। (চলবে)

 

লেখক : সুপারস্টার গ্রুপের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও কোম্পানি সচিব

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০