পুঁজিবাজার বিষয়ে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে

 

এডি রেশিও সমন্বয়ের মেয়াদ বাড়ানোয় একটি ইতিবাচক প্রভাব আসবে বাজারে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ডিএসই, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ যে কারোই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবার সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া ভালো। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় থাকার প্রয়োজন আছে। বিগত বছরগুলো থেকে একটি অভিজ্ঞতা হয়েছেÑযে কেউই কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তার প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারের ওপর। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক মাঝেমধ্যেই কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে। তাই পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করেÑএমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে সমন্বিতভাবে নেওয়া উচিত। আর দীর্ঘদিন ধরেই এ সমন্বয়ের অভাব লক্ষ্য করা গেছে। বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা দরকার। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ডেইলি স্টারের বিজনেস এডিটর সাজ্জাদুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এম শাহজাহান মিনা।

সাজ্জাদুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এডি রেশিও সমন্বয়ের মেয়াদ বাড়িয়েছে। আমার মনে হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন উদ্যাগ সামগ্রিক ব্যাংক খাত, মানি মার্কেট ও পুঁজিবাজারের জন্য অবশ্যই ভালো হয়েছে। কারণ এই এডি রেশিও ৩০ জুনের মধ্যে ৮৩ দশমিক পাঁচে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে যেসব ব্যাংকের এডি রেশিও অধিক, তাদের ১০০ টাকায় ছয় দশমিক পাঁচ টাকা কমিয়ে আনতে হবে। যার ফলে তারা নতুন ঋণ তো দিতেই পারছে না বরং তাকে মার্কেট থেকে অধিক খরচে ডিপোজিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, অনেক ব্যাংক ৯; ৯ দশমিক পাঁচ, আবার কেউ ১০ শতাংশও লভ্যাংশ দিয়েছে। অনেক নন-ব্যাংকিং আর্থিক কোম্পানি দুই ডিজিটের ডিপোজিট রেট প্রস্তাব করছে। ফলে উচ্চহার পেলে বাজার থেকে কিছু টাকা ব্যাংক খাতে যাবে। পুঁজিবাজার থেকে ইতোমধ্যে  বেশ কিছু ফান্ড রূপান্তর হয়েছে ব্যাংকে। কারণ অনেক বিনিয়োগকারী ভেবেছেন এটি নির্বাচনের বছর, তাই কিছুটা অস্থিরতা থাকবে। কাজেই এ সময় ব্যাংক থেকে যদি এমন ঝুঁকিবিহীন ডাবল ডিজিটের সুদহার পাওয়া যায়, তাহলে সেখানেই অর্থ রাখা ভালো। তাছাড়া ১০ শতাংশের মতো সুদহার পেলে তো জনগণের পুঁজিবাজারে যাওয়ার দরকার হয় না। কারণ সে নিশ্চিত, একটি ভালো লভ্যাংশ পাচ্ছে ব্যাংক থেকে। কাজেই এডি রেশিও যদি না কমাত বা সময়সীমা যদি না বাড়াত, তাহলে ব্যাংকগুলোর মার্কেটে যে স্টক আছে, সেখান থেকে শেয়ার বিক্রি করতে হতো। সেটির একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ত বাজারে এবং মার্কেট থেকে টাকা বের হয়ে যেত। তাই ব্যাংকগুলো ছয় মাসের যে অতিরিক্ত সময় পেয়েছে, সেটি পুঁজিবাজারের জন্য খুব ভালো একটি দিক বলে মনে করি। তিনি বলেন, দেশের বাজারে প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় প্লে করে ‘গেম মেকার’ হয়ে যায়। বলা যায় আইসিবি এ বাজারে সব থেকে বড় প্লেয়ার। অনেক সময় শোনা যায়, তারাও প্লে করে। তারা যেহেতু বড় ফান্ড পরিচালনা করে, তাই তাদের ওই সুযোগ আছে। এখানে প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এভাবে প্লে করে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক কিছু জানে। তাদের অনুসন্ধানী দল আছে। অনেক সময় তারা আগাম খবরও রাখে বিভিন্ন কোম্পানি সম্পর্কে। তাই এসব বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের হস্তক্ষেপ করতে হবে।

এম শাহজাহান মিনা বলেন, এডি রেশিওর সমন্বয়ের মেয়াদ বাড়ানোতে হয়তো একটি ইতিবাচক প্রভাব আসবে বাজারে। তবে লক্ষ্য করলে দেখবেন, মুদ্রানীতি, এডি রেশিও, রেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় ও স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার প্রভৃতির বিষয় সম্প্রতি বাজারকে অস্থির করে তুলেছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ডিএসই, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ যে কারোই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া ভালো এবং এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় থাকার প্রয়োজন আছে। কারণ বিগত বছরগুলো থেকে আমাদের একটি অভিজ্ঞতা হয়েছে, যে কেউই কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তার একটি প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারের ওপর। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক মাঝেমধ্যেই কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারের ওপর। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারের যা ক্ষতি হওয়ার, তা হয়ে গেছে।

 

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০