পুঁজিবাজার সংক্রান্ত খবর পরিবেশনে দায়িত্বশীলতা কাম্য

‘বাজারে গতি ফিরেছে’ শিরোনামে গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত খবরটি এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথা। সেখানে সংক্ষিপ্ত মন্দা কাটিয়ে স্থানীয় পুঁজিবাজার আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে খবর দিয়েছেন প্রতিবেদক। তিনি বলছেন, মার্চের শুরুটা যেমন-তেমন কাটলেও বাঙালি জাতিসত্তার ঐতিহাসিক দিন ৭ মার্চ থেকে বাজারের প্রায় সব খাতের শেয়ারদরকেই দেখা গেছে ঊর্ধ্বমুখী। তার পরদিন ছিল নারী দিবস। সেদিন নাকি বাজারের নেতৃত্ব চলে যায় ব্যাংকিং খাতের হাতে এবং তার সঙ্গী ছিল বিমা খাত। হিসাবমতে, বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এ দুই বাজারে আগের দিনের তুলনায় লেনদেন হয় কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা বেশি। অবশ্য অনেকে বলতে পারেন, সব খাতের পতন হলেও ব্যাংকিং খাতের শেয়ারদর বাড়লে বাজার ইতিবাচক থাকে। আবার শীর্ষ পুঁজিবাজার ডিএসই-তে সংখ্যার দিক দিয়ে বস্ত্র ও বিমা খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি সবচেয়ে বেশি। ফলে কোনো কোনো সমালোচক বলতে পারেন, এটি সমগ্র বাজারের উন্নতি নয়; বরং কয়েকটি খাতের উন্নতি মাত্র। উল্লেখ্য, বুধবার কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর মধ্যে মন্দা গেছে আর্থিক, প্রকৌশল, আইটি, ওষুধ ও রসায়ন এবং বস্ত্র খাতে। অবশ্য সেসব সমালোচনার জবাব না দিয়েও বলা যায়, ওইদিন ডিএসই’র প্রধান সূচক বেড়েছিল ২৭ পয়েন্ট। ফলে সার্বিকভাবে বিষয়টি ইতিবাচক বলে প্রতীয়মান।

শেয়ারবাজারের তাৎক্ষণিক এ উন্নতির প্রশংসাবাদ অবশ্য আজকের সম্পাদকীয় লেখার উদ্দেশ্য নয়। বরং বাজারের সংক্ষিপ্ত এ ওঠানামাকে কেন্দ্র করে কী মানের সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে একশ্রেণির মিডিয়ায়, সেটি লক্ষ করে আমরা চিন্তিত। হতে পারে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সাংবাদিকতার ইতিহাস বেশিদিনের নয়। কিন্তু সংবাদ পরিবেশন যে একটা দায়িত্বশীলতার বিষয়, তা যেন অনেক সময় খেয়ালই থাকে না একশ্রেণির প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক, বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাঠকভিত্তিক মিডিয়ায়। অনেকেই লক্ষ করে থাকবেন, বাজারে শেয়ারদর একটু বাড়তে শুরু করলেই বিরাট ইতিবাচক ঘটনা হিসেবে সেগুলো ফলাও করে প্রচার হয় বিভিন্ন মিডিয়ায়। আর অনলাইনভিত্তিক যেসব মিডিয়ার নিজস্ব উৎস নেই, তারা ওই সংবাদ অনুকরণে ঘটায় গুজবের বিস্তার। অথচ বাজারে একই সঙ্গে সমভাবে বিরাজ করে ঝুঁকি ও সম্ভাবনা। ফলে যখন ঝুঁকি প্রকট হয়ে ওঠে, তখন আবার এর প্রকৃত গতি-প্রকৃতি নির্ণয়ে ব্যর্থ মিডিয়াগুলো নেতিবাচক খবর প্রকাশে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে বিনিয়োগকারীদের। অথচ বাজারের উত্থান ও পতন উভয় ক্ষেত্রেই সব ধরনের গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন জরুরি। এক্ষেত্রে অনেকে আবার যুক্তি দেখান, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ওয়ালস্ট্রিট ঘিরে যদি শতভাগ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদই পরিবেশিত হতো, তাহলে সেখানে ২০০৮ সালের আর্থিক বিপর্যয় ঘটলো কীভাবে? তাদের জ্ঞাতার্থে জানানো দরকার, ওই বিপর্যয়কালে মূলধারার মার্কিন অর্থনৈতিক পত্রিকাগুলো নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে বলে জানা যায় না। সে সময় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় বরং সরব অংশগ্রহণ ছিল তাদের। আর কাজটি তারা সম্পন্ন করেছে বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। এক্ষেত্রে আমরা হয়তো রাতারাতি উন্নতি করতে পারবো না। কিন্তু উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা নিতে হবে। কেননা অর্থনীতিতে মিডিয়ার ভূমিকা থাকবে না এ কথা কোথাও লেখা নেই। সাংবাদিকতার মানোন্নয়নের স্বার্থেও এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সজাগ থাকা প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকেও উচিত গুজব ও ভিত্তিহীন খবর থেকে বিনিয়োগকারীদের দূরে রাখতে মানসম্মত ও দায়িত্বশীল অর্থনৈতিক সাংবাদিকতায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০