শেয়ার বিজ ডেস্ক: পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী হি লাইফেং। বাজার স্থিতিশীল রাখবে, এমন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর স্বার্থ রক্ষার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এর বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি। এদিকে দেশটির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আবাসন ও প্রযুক্তি খাতের সব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। খবর: সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি।
বেইজিং পুঁজিাবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিরগুলোর প্রতিনিধির সঙ্গে একটি ভিডিও কনফারেন্সে এসব কথা বলেন হি লাইফেং। তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সেন্ট্রাল কমিটির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য।
দীর্ঘদিন ধরে চীনের পুঁজিবাজারে মন্দা চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে সেই ধাক্কা কিছুটা কাটিয়ে উঠলেও তা কতটা স্থায়ী হবে, তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন দেশটির পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। মূল্যসূচকের পতনের পর চীনের নীতিনির্ধারকরা দেশের পুঁজিবাজারকে চাঙা করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। বেইজিংয়ের দুই ট্রিলিয়ন ইউয়ান (২৭৮ বিলিয়ন ডলার) প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করার পর দেশটির পুঁজিবাজারে এই সূচক বৃদ্ধি পায়। এর মধ্য দিয়ে চলতি বছরে গত সপ্তাহে প্রথম উত্থান দেখে সাংহাই কম্পোজিট সূচক।
গত বছরজুড়ে বিশ্বে সবচেয়ে নেতিবাচক অবস্থানে ছিল চীনের পুঁজিবাজার। আবাসন খাতের টালমাটাল পরিস্থিতি এবং প্রবৃদ্ধির ধীরগতির প্রভাব পড়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে।
ভিডিও কনফারেন্সে হি লাইফেং বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান দরকার।
তার মতে, কোম্পানিগুলোর প্রযুক্তিগত স্ব-নির্ভরতা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেন। করপোরেট কাঠামো ও গভর্ন্যান্স উন্নয়নে বিশেষ জোর দেন। একটি আধুনিক শিল্প ব্যবস্থার নির্মাণকে ত্বরান্বিত করতে এবং বাজারের আস্থা বাড়াতে সাহায্য করে, এ ধরনের পদক্ষেপ কাজে আসবে বলে আশাবাদী তিনি।
আস্থা বাড়াতে ও পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে সরকারি বিভাগগুলোকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য সমর্থন বাড়াতে হবে বলে মনে করেন ভাইস প্রিমিয়ার। তিনি কনফারেন্সে সম্পত্তি অর্থায়নের বিষয়েও বক্তব্য দেন। তিনি উল্লেখ করেন, স্থানীয়দের শহরে আবাসন খাতের কোম্পানিগুলোর অর্থায়নে সমন্বয় করতে হবে এবং খাতটি কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, হংকংয়ের একটি আদালত গত সোমবার দেশটির বৃহত্তম আবাসন প্রতিষ্ঠান চায়না এভারগ্রান্ড গ্রæপের অবসায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। বিশ্বে সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত আবাসন কোম্পানিটির মোট দেনার ছাড়িয়েছে ৩০০ বিলিয়ন বা ৩০ হাজার কোটি ডলার। তাদের ঋণ পুনর্গঠন করার তাগিদ দেয়া হলেও তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। কোম্পানিটির সার্বিক কর্মকাণ্ডের প্রভাব পড়েছে এশিয়ার পুঁজিবাজারে। এর মধ্যেই এক পাওনাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হংকংয়ের আদালত এভারগ্রান্ডকে অবসায়নের নির্দেশ দেন।
সাংহাই কম্পোজিটে গত মঙ্গলবার এভারগ্রান্ডে প্রোপার্টি সার্ভিসের শেয়ারের দাম কমে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে চায়না এভারগ্রান্ডে নিউ এনার্জি ভেহিক্যাল গ্রæপের শেয়ারের দাম ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ এর আগের দিন ট্রেডিং বন্ধ রাখে গ্রæপটি।
চীনের অন্য আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দাম কমেছে। এ কারণে হংকংয়ের প্রধান মূল্যসূচক হ্যাং সেং সূচক কমেছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এতে তাদের পয়েন্ট কমে নেমে এসেছে ১৫ হাজার ৭০৩ দশমিক ৫৪-এর স্তরে।
দেশটির আরেক আবাসন প্রতিষ্ঠান কান্ট্রি গার্ডেনের শেয়ারের দাম কমেছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এছাড়া গুয়াংজু আরঅ্যান্ডএফ প্রোপার্টিজের শেয়ারের দাম কমেছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে মঙ্গলবার সবচেয়ে নি¤œমুখী ছিল সুনাক চায়না হোল্ডিংসের শেয়ারদর। তাদের পতন হয়েছে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
মঙ্গলবার চীনের প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দামও কমেছে। খাবার সরবরাহ কোম্পানি মেইতুয়ানের শেয়ারের দাম কমেছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। অতিকায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবার শেয়ারদর কমেছে ২ শতাংশ।
সামগ্রিকভাবে সাংহাই কম্পোজিট সূচক ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমে দুই হাজার ৮৩০ দশমিক ৬৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।