পুঁজি সংকটে মাগুরার পাদুকা শিল্প

মো. ইমাম জাফর, মাগুরা: মাগুরায় পাদুকা শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা এখন আর ভালো নেই। এক সময় মাগুরায় ৩২টি কারখানা থাকলেও পুঁজির অভাবে ২৭টিই বন্ধ হয়ে গেছে। যে পাঁচটি এখনও চালু আছে তাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অথচ মাগুরার তৈরি জুতা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রয় হতো। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এ জুতার চাহিদা ছিল।

গত শতাব্দির ৯০ দশকের শুরুতে মাগুরা শহরের ঋষি রোড়ে পাদুকা শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। এ শিল্পের প্রারম্ভিক যাত্রাই যাদের নাম উল্লেখযোগ্য তারা হলেন খগেন দাস, জিতেন দাস ও কুরবান মিয়া। পরবর্তী সময়ে ৩২টি কারখানা গড়ে ওঠে। মাগুরায় তৈরি জুতা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হতো। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এ জুতার চাহিদা ছিল। মাগুরার একসময়ের ঐতিহ্যবাহী পাদুকা শিল্পের বাজার এখন  আর ভালো নেই। স্থানীয় জুতা-স্যান্ডেলের  বাজারে চোখে পড়ার মতো নেই কোনো ক্রেতার ভিড়। এ শিল্পের বিপর্যয়ের মূলে রয়েছে পুঁজি সংকট। এ সংকটের কারণে অনেকেই চড়া সুদে মহাজনি ঋণ নিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। স্থানীয় জুতা-স্যান্ডেল কারখানার মালিক ওয়াশিম কুমার দাস জানান, আগে ৩২টি কারখানায় নিয়মিত  ৯০ থেকে ১০০ জন কারিগর কাজ করতেন। বর্তমানে মাত্র পাঁচটি কারখানায় ২০ থেকে ২৫ জন কারিগর কাজ করেন।

এ শিল্পের শুরু থেকেই কর্মরত রবীন্দ্র কুমার দাস জানান, শ্রমিকের মুজুরি কম হওয়ায় অনেকেই এ পেশা ছেড়ে রিকশা, ভ্যান বা অটো চালাচ্ছে। এছাড়া ২০ থেকে ২৫ জন কারিগর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাড়ি জমিয়েছে। কম পুঁজি এবং পৃষ্ঠপোশকতার অভাবে মাগুরার জুতার বাজারে আজ এ বেহাল দশা। কারিগর সাগর কুমার দাশ জানান, তারা কমিশনভিত্তিক কাজ করে থাকেন। একজন কারিগর প্রতিদিন গড়ে ১১ থেকে ১২ জোড়া জুতা অথবা স্যান্ডেল তৈরি করতে পারেন। সারা দিন কাজ করে একজন  কারিগর ২৭৫ থেকে ৩৫০ টাকা মজুরি পান। তাও বছরের সব সময় কাজ থাকে না। এ কারণে অনেকে এ কাজ ছেড়ে ব্যক্তি পর্যায়ে জুতা-স্যান্ডেল মেরামতের কাজ করছে।

পায়ে পায়ে জুতার দোকান মালিক জানান, মাগুরার তৈরি জুতা-স্যান্ডেলের মান ভালো, তবে দাম বেশি। স্থানীয় কারখানার মালিকদের পুঁজি কম থাকায় বাজারের চাহিদা মতো জুতা-স্যান্ডেল সরবরাহ করতে পারেন না। তাছাড়া  বাকিতেও বেচাকেনা করতে পারেন না, যার কারণে তারা ঢাকা ও কুষ্টিয়ার মোকাম থেকে জুতা কেনেন।

জেলার বণিক সমিতির সভাপতি হুমায়ন কবির রাজা জানান, মাগুরার এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী পাদুকা শিল্পের বাজার ফিরিয়ে আনতে হলে স্বল্প সুদে স্থানীয় পাদুকা ব্যবসায়ীদের ঋণ সুবিধা দিতে হবে। যুগের সঙ্গে আধুনিক ডিজাইনের বিষয়টিও মাথাই রাখতে হবে। বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির জেলা পরিচালক খান আফজাল হোসেন জাহাঙ্গীর জানান, দেশীয় পাদুকা ক্রয় বিষয়ে প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহজশর্তে ঋণ সুবিধা পেলে মাগুরার একসময়ের পাদুকা শিল্পের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০