পুঁজি হারালে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নামবেন এটাই স্বাভাবিক

পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কষ্টের পুঁজি হারিয়ে গেলে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নামবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নামলে পুঁজিবাজারের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। অথচ প্রতিদিন বাজারের সূচক পড়ছে এবং নিম্নমানের কোম্পানি বাজারে আনা হচ্ছে, এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাজারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে না? আর বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নামলেই ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। বিষয়টি আসলেই হাস্যকর। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মাহমুদ হোসেন, এফসিএ এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক আবদুর রহিম হারমাছি।
মাহমুদ হোসেন বলেন, প্রতিনিয়ত আস্থার সংকটে পড়ছে পুঁজিবাজার। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে না। গ্রামীণফোনের কাছে পাওনা আদায় নিয়ে টানাপড়েন চলছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। আসলে পুঁজিবাজার এলোমেলোভাবে চলছে। যারা পুঁজিবাজারের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত অর্থাৎ যাদের দেখভাল করার কথা তারা সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বাজারের এ দুরবস্থা এবং অব্যবস্থাপনার খবর প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যাচ্ছে না। এটা বাজারের জন্য শঙ্কার বিষয়। কারণ যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাজারের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ প্রণোদনা থাকবে। কিন্তু যথাযথ মহল বাজারের সঠিক তথ্য তাকে জানাচ্ছে না এবং বাজেটে তেমন কোনো প্রণোদনা পলিসিও আনতে পারেনি। আবার ইকুইটির বিপরীতে ভালো কোনো পণ্য নেই। শুধু ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানির শেয়ার রয়েছে। এ দুটি খাত এখন নড়বড়ে অবস্থায়। যার প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে। এটা দেখার দায়িত্ব কার? মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নিম্নমানের কোম্পানি আনছে। যারা এসব কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে সই করছে তারা দায় এড়াতে পারে না। আবার মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বাজারে তেমন সক্ষমতা দেখা যাচ্ছে না। একজন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর যে ভূমিকা পালন করার কথা সেটিও দেখা যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এটাও কিন্তু বিনিয়োগকারীদের অনাস্থার একটি কারণ। আশা করেছিলাম স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার আসায় বিভিন্ন ধরনের পণ্য আসবে এবং বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন দেশের পুঁজিবাজারে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হলো। এরপর বাজার সম্প্রসারিত হবে, নতুন নতুন বিনিয়োগকারী আসবে। কিন্তু এর কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বিষয়টি আসলে চিন্তার।
আবদুর রহিম হারমাছি বলেন, ২০১০ সালে বাজার ধসের পর প্রায় ৮৫ থেকে ৯০টি কোম্পানি বাজারে এসেছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ফেস ভেলুর নিচে রয়েছে। আসলে এসব কোম্পানি ভালোভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়নি। গত পাঁচ থেকে ছয় বছরে বাজার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে দেখা যায়নি। কথা হচ্ছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজে যদি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং ভালো কিছুর প্রতিফলন না পাওয়া যায়; সে ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা থাকে না। তবে হ্যাঁ, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলোও কিন্তু বাস্তবায়ন করতে দেখা যায়নি। ফলে বাজারে আজ এ অবস্থা বিরাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিনিয়ত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে রাস্তায় নামবেনই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে বলা হচ্ছে, রাস্তায় নামলে পুঁজিবাজারের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। কিন্তু প্রতিদিন বাজারের সূচক পড়ছে এবং নিম্নমানের কোম্পানি বাজারে আনা হচ্ছে, এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাজারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে না? আর বিনিয়োগকারী রাস্তায় নামলেই ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। বিষয়টি আসলেই হাস্যকর।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০