পুঁতি-পাথরের শোপিসে স্বাবলম্বী শিউলী

যে কোনো উদ্যোগের শুরুতে আসে অনেক বাধাবিপত্তি। এসব গায়ে না মেখে লেগে থাকলে সফল হওয়া যায়। যারা সফল হন, তাদের অনুসরণ করলে আরও নতুন উদ্যোগ শুরু হয়। নানা খাতের সেসব সফল উদ্যোক্তাকে নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজন
পুঁতি-পাথরের দৃষ্টিনন্দন শোপিস তৈরি করে সচ্ছলতার মুখ দেখেছেন জামালপুরের জান্নাতুল মাওয়া শিউলী। পাশাপাশি এ কাজে প্রশিক্ষণ দিয়ে শতাধিক নারীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করেছেন তিনি। বর্তমানে কারাগারের বন্দিদের শোপিস তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন শিউলী।
জান্নাতুল মাওয়া শিউলীর বিয়ে হয় বাল্য বয়সে। সে সংসার বেশিদিন টেকেনি। পারিবারিক কলহের কারণে দু’মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে স্বামীর সংসার ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। এরপর থেকে শুরু হয় তার ভাগ্যোন্নয়নের সংগ্রাম। ২০১১ সালে গাজীপুরের সফিপুর আনসার একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় পুঁতি-পাথরের কাজ শেখেন শিউলী। প্রশিক্ষণ শেষে বাবার দেওয়া এক হাজার টাকা ও তিন কর্মীকে নিয়ে শুরু করেন পুঁতি-পাথর দিয়ে শোপিস তৈরির কাজ। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সব খরচ মিটিয়ে প্রতি মাসে তার আয় হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। বর্তমানে গ্রামের দরিদ্র ও ভাগ্যবঞ্চিত শতাধিক নারী তার অধীনে শোপিস তৈরি করছে। এসব নারী একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে, অন্যদিকে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনছে।
দড়িহামিদপুর গ্রামের ফলিলাতুন নেছা শিফা জানান, এক সময় নিজের কোনো প্রয়োজন হলে স্বামীর কাছে টাকা চাইতে হতো। এখন আর তার কাছে টাকার জন্য হাত পাততে হয় না। শিউলী আপার এখানে পুঁতি-পাথরের কাজ করে মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা উপার্জন করি। নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে উল্টো সংসারের জন্য খরচ করতে পারছি। একই গ্রামের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিমু খাতুন জানায়, লেখাপড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে পুঁতি-পাথরের কাজ করি। এখান থেকে যে টাকা পাই, তা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালানোর পর বাড়তি টাকা বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিই। পরিবারের কাছ থেকে এখন আমাকে টাকা নিতে হয় না।
শিউলী শুধুই গ্রামের দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করছেন না, প্রশাসনের সহায়তায় জামালপুর কারাগারের বন্দিদের পুঁতি-পাথরের কাজ শেখাচ্ছেন, তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত মেলায় শোপিস নিয়ে অংশ নেন।
শিউলির সবচেয়ে ভরসা ও প্রেরণার উৎস তার বাবা হাজী লিয়াকত আলী। শুরু থেকে বাবার সহায়তা পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে ছেলে রাব্বীও তাকে সহায়তা করছে। সম্প্রতি জামালপুরে আয়োজিত এসএমই পণ্যমেলার মাধ্যমে শিউলীর তৈরি পুঁতি-পাথরের শোপিস কানাডা ও মালয়েশিয়ার বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে।
শিউলী নিজের সংগ্রামের কথা জানিয়ে বলেন, পুঁতি-পাথরের তৈরি শোপিসের চাহিদা রয়েছে। আর্থিক সংকটের কারণে এ ব্যবসার প্রসার বড় আকারে করতে পারছি না। সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিলে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারতাম।
জামালপুর বিসিকের ভারপ্রাপ্ত সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আওরঙ্গজেব খান শিউলীর সাফল্য প্রসঙ্গে বলেন, তিনি এ কাজের মাধ্যমে যেমন নারীদের স্বাবলম্বী করছেন, কারাবন্দিদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তার এ কাজের প্রসার ঘটাতে বিসিক থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।

সৌরভ আবিদ

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০