সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পুঞ্জীভূত মুনাফায় শীর্ষে রয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে প্রতিষ্ঠানটির পুঞ্জীভূত মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পদ্মা অয়েল কোম্পানি। এ প্রতিষ্ঠানে পুঞ্জীভূত মুনাফার পরিমাণ এক হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। অপরদিকে দিন দিন লোকসান বেড়ে যাওয়ায় পুঞ্জীভূত লোকসান বাড়ছে ইস্টার্ন কেব্ল ও উসমানিয়া গ্লাস শিট কোম্পানির। এসব কোম্পানির সর্বশেষ অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রকাশিত নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রকাশিত নিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুসারে, চট্টগ্রামে আবাসিক, শিল্প-কলকারখানা, বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনে প্রতিবছরই বাড়ছে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা। এ ক্রমবর্ধিত চাহিদার মধ্যে কেজিডিসিএল গ্রাহকের চাহিদা রয়েছে প্রতি মাসে গড়ে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। কিন্তু এর বিপরীতে কেজিডিসিএল সরবরাহ করতে পারে মাত্র ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ফলে চাহিদার বিপরীতে অর্ধেকের কম সক্ষমতা নিয়ে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে কেজিডিসিএল নিট মুনাফা করেছে ৩৫১ কোটি টাকা। নিট মুনাফা এ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬১৮ কোটি টাকা, যা চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পুঞ্জীভূত মুনাফায় শীর্ষে।
এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে জ্বালানি খাতের পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানে পুঞ্জীভূত মুনাফার পরিমাণ এক হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। আর তৃতীয় অবস্থানে মেঘনা পেট্রোলিয়াম কোম্পানি। এ কোম্পানির পুঞ্জীভূত মুনাফার পরিমাণ ৪১২ কোটি টাকা। এদিকে চতুর্থ অবস্থানে থাকা যমুনা অয়েল কোম্পানির পুঞ্জীভূত মুনাফার পরিমাণ ৩৩৬ কোটি টাকা।
অপরদিকে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে থাকায় নিট পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৯ কোটি টাকা। যেখানে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির নিট লোকসান ছিল ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
একই অবস্থা বাংলাদেশ ইস্পাত এবং প্রকৌশল করপোরেশনের আওতাধীন কোম্পানি ইস্টার্ন কেব্ল লিমিটেডেরও। পতেঙ্গায় অবস্থিত কোম্পানিটির নিট পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ৩৫ কোটি টাকা। এ কোম্পানিটিও গত ২০২০-২১ অর্থবছরের নিট লোকসান করে চার কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
কেজিডিসিএল সূত্রে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরের কোম্পানিটির মোট বিক্রয় রাজস্ব ছিল তিন হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। এতে নিট মুনাফা হয়েছে ৩৫১ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৩৬২ কোটি টাকা। যদিও চলতি অর্থবছরের আন্তর্জাতিক বাজারের গ্যাসের দাম বাড়তি থাকায় মুনাফার পরিমাণ কমতে পারে।
সংস্থাটির প্রতিবেদনমতে, বর্তমানে কোম্পানির শিল্প, বাণিজ্যিক ও আবাসিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রমপুঞ্জিত গ্রাহক সংযোগ দাঁড়ায় মোট ছয় লাখ দুই হাজার ৩৫৯টি। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহকসংখ্যা পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার ৯৯৬টি, বাণিজ্যিক গ্রাহক দুই হাজার দুই হাজার ৯১০টি, শিল্প সংযোগ এক হাজার ১৭১টি, ক্যাপটিভ পাওয়ার ২০১টি, সিএনজি স্টেশন ৭০টি, সার কারখানা চারটি, বিদ্যুৎকেন্দ্র পাঁচটি এবং চা বাগান রয়েছে দুটি। বিদ্যুৎকেন্দ্র সংখ্যা ৫টি, আর তাদের গ্যাসের চাহিদার ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের বিপরীত বর্তমানে সরবরাহ রয়েছে ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ ঘাটতি দাড়াঁয় ১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা এমএ মাজেদের ব্যবহƒত মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব বিপ্লব কুমার মজুমদার সম্প্রতি শেয়ার বিজকে বলেন, দীর্ঘসময় লোকসানের কারণে পুঞ্জীভূত লোকসান বেড়েছে। চেষ্টা চলছে কোম্পানিকে ঘুরে দাঁড়ানোর। এরমধ্যে কারখানার দুই নম্বর ফার্নেসের উৎপাদন চলতি অর্থবছরের শুরুতে চালু হয়েছে। যদিও করোনার প্রভাবে বিক্রয় কম হওয়ায় স্টক জমে আছে। আর নতুন ৪০০-৫০০ কোটি টাকার কনটেইনার গ্লাস ইউনিট করার জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি ও মার্কেট স্টাডি করা হয়েছে। সেখানে কিছু পর্যবেক্ষণ এসেছে। এরপর প্রকল্প ডিজাইন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও অর্থায়ানের উৎস ইত্যাদি নিশ্চিত হলে কাজ শুরু করা যাবে। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।