Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:06 pm

পুনঃঅর্থায়ন তহবিল মেয়াদ বেড়েছে দুই  বছর, কমেছে সুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজার ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি পোষাতে সরকারের দেওয়া তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার আগ্রহ নেই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের। কয়েক দফা পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি সুদের হার কমানো হলেও ২৫৮ কোটি টাকা অব্যবহৃত পড়ে আছে। এ অবস্থায় তহবিল তদারকি কমিটি নতুন করে আরও দুই বছর সময় বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে সুদের হার দেড় শতাংশ কমিয়ে ছয় শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর দ্বিতীয়বারও বিনিয়োগকারীরা ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি।

গতকাল বুধবার আইসিবির বোর্ড রুমে কমিটির আহবায়ক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সাইফুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে তহবিল গঠন করা হয়েছে, তার মেয়াদ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর এই তহবিলের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

তিনি আরও জানান, এই তহবিলের ঋণে সুদহার কমানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ হারে সুদ নির্ধারিত থাকলে নতুন করে ছয় শতাংশ সুদ হারের যে প্রস্তাব সুপারিশ করা হয়েছিল, তা মেনে নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এখন এই তহবিল থেকে কেউ ঋণ নিলে তাকে ছয় শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। সুদহার কমবে যে টাকা এখনও ছাড় হয়নি তার জন্য।

উল্লেখ্য, গত আড়াই বছরে বারবার তাগাদা দিয়েও ওই তহবিল থেকে নতুন করে ঋণ নেওয়ার আশানুরূপ আবেদন পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, এ তহবিলের টাকা নিতে বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশ কিছু শর্ত আরোপ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছেÑঋণের জামানত হিসেবে সংশ্লিষ্ট মার্চেন্ট ব্যাংক বা স্টক-ব্রোকারকে করপোরেট গ্যারান্টি দিতে হবে, ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে বিএসইসি সংশ্লিষ্টদের জরিমানা করতে পারবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের (মার্চেন্ট ব্যাংক-স্টক ব্রোকার) নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতার কারণে এ ঋণ নেওয়ার আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের। বিশেষ করে পুনরায় ঋণ নিয়ে নতুন ঝুঁকি নিতে চান না তারা। এ অবস্থায় যদি বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি দীর্ঘ মেয়াদে ভালো থাকত, তবে হয়তো এ ঋণের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ কিছুটা বাড়ত।

বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে এ তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে খুব একটা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। একই সঙ্গে বাজারের পরিস্থিতিও তেমন নয় যে, বাজার থেকে মুনাফা করে কিস্তি দেওয়া সম্ভব। তাই অনেকেই এ ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হননি। ঋণের শর্ত আরও সহজ করার দাবি জানান তারা।

‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’-এর সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘২০১০ সালের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। সরকারের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। সহজ শর্তে ঋণ দিলে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ৯০০ কোটি টাকা বিতরণ করা যেত। উপকৃত হতেন লাখো বিনিয়োগকারী। তবে এভাবে বাজারের উন্নতি করা যাবে না। দরকার ভালো কোম্পানিকে বাজারে নিয়ে আসা। দুর্বল কোম্পানিকে আইপিওর অনুমোদন দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আবারও রাস্তায় নামানো হচ্ছে। ফলে ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকবে’ বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীদের এ নেতা।

কথা হয় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভির সঙ্গে। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এ তহবিলটা শুধু ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য। ২০১০ সালে সূচকের বড় ধসের পরে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু সবাই এ তহবিলের সুবিধা পাচ্ছেন না। এর আওতা আরও বাড়ানো দরকার’ বলে মনে করেন তিনি।

মডার্ন সিকিউরিটিজের সালাউদ্দিন সবুজ নামের এক ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ব্যাংকঋণের সুদের হার কমে যাওয়ায় এখন তহবিলের ঋণের চাহিদা নেই। ব্রোকারেজ হাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো এখন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের কম সুদে ঋণ দিচ্ছে। যে কারণে প্রণোদনার ঋণের প্রতি বিনিয়োগকারীদের কোনো আগ্রহ নেই।’

প্রসঙ্গত, সরকার ২০১১ সালের ২৩ নভেম্বরে পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় বিশেষ স্কিমের ঘোষণা দেয়। সরকারি ঘোষণার প্রায় দুই বছর পর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃঅর্থায়নের তিন কিস্তি বাবদ ৯০০ কোটি টাকা আইসিবিকে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তহবিলের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। প্রণোদনার এই অর্থ ব্যবহার তদারকি করতে একটি কমিটি গঠন করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।