সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস গত বছর ৪৪টি চালানে ৯ হাজার ৫২৬ টন আমদানি নিষিদ্ধ ফিশ ফিড (মাছের খাদ্য) আটক করে। তারপর পণ্যগুলোর রাসায়নিক পরীক্ষা করলে শূকরের বর্জ্য ও হাড়যুক্ত (বোভাইন ও প্রসিন) মিট অ্যান্ড বোন মিল (এমবিএম) পাওয়া যায়, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় আমদানি নিষিদ্ধ।
যদিও প্রায় ৪৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা মূল্যের এসব আমদানি পণ্য ছাড় নিতে আমদানিকারকরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। কিন্তু উচ্চ আদালত এসব চালানে মিট অ্যান্ড বোন মিল থাকলে, পণ্য না ছাড় দেওয়ার বিষয়ে রায় দেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করারও নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর চট্টগ্রামের পোলট্রি রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিআরটিসি), রাজধানীর বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার পর ফিশ ফিডের চালানে বোভাইন ও প্রসিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। ফলে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যগুলো ছাড়করণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়েন আমদানিকারকরা। তারপর অনেকটা বাধ্য হয়ে মিট অ্যান্ড বোন মিলের চালানগুলো সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ফেরত পাঠাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়।
এর ধারাবাহিকতায় ম্যাগনিফাই অ্যাগ্রো লিমিটেড, ফিশটেক বিডি লিমিটেড, অ্যাডভান্স এগ্রোটেক বাংলাদেশ, ভিএনএফ এগ্রো লিমিটেড ও একোয়াটেক এগ্রো বিডি লিমিটেড চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনারের কাছে আবেদন করে। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি তাদের পণ্য চালান পুনঃরপ্তানির আদেশ দেয়। একই সঙ্গে ছাড়পত্র পাওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে একজন সহকারী কমিশনারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে পণ্য চালান পুনঃরপ্তানির শর্ত দেওয়া দেওয়া হয়।
এরই মধ্যে ফিশটেক বিডি লিমিটেডের চারটি চালান ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর ম্যাগনিফাই এগ্রো লিমিটেডের তিনটি, অ্যাডভান্স এগ্রোটেক বাংলাদেশ, ভিএনএফ এগ্রো লিমিটেড ও একোয়াটেক এগ্রো বিডি লিমিটেডের একটি করে চালান ফেরতের অপেক্ষায় আছে।
এসব চালানগুলো চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০১৯ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৩ জন আমদানিকারক ৪৪টি চালানের মাধ্যমে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, বেলজিয়াম ও শ্রীলঙ্কা থেকে প্রায় ৪৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসে।
এদিকে আমদানিকারকরা জানান, ইমপোর্ট পলিসিতে ডিএনএ টেস্টের বিধান ছিল না। পণ্য আমদানি হওয়ার পর ডিএনএ টেস্টের নিয়ম চালু হয়। দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বন্দরে চালান আটকে থাকায় বন্দরে বিপুল পরিমাণ চার্জ পরিশোধ করতে হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, ‘ফিশ ফিড ঘোষণা দিয়ে আনা বেশ কিছু চালানে মিট অ্যান্ড বোন মিলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কোনো অবস্থায় আমদানি নিষিদ্ধ এসব পণ্য খালাস করতে দেওয়া হবে না। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনঃরপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আরও বেশ কিছু আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মিথ্যে ঘোষণায় পণ্য আমদানির দায়ে এরই মধ্যে আমদানিকারকদের কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। কাস্টমস আইন অনুযায়ী তাদের জরিমানা করা হবে।’
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে থাকা অন্য চালানগুলো আমদানি করে আয়েশা করপোরেশন, স্পেক্ট্রা হ্যাক্সা ফিড লিমিটেড, প্রমেক এগ্রো অ্যান্ড ফিড প্রডাক্টস লিমিটেড, ফিশটেক বিডি লিমিটেড, একোয়াটেক এগ্রো বিডি লিমিটেড, অ্যাডভান্স এগ্রোলেক বাংলাদেশ, কোয়ালিটি ফিডস, আরআরপি এগ্রো ফার্ম, ইন্টার এগ্রো বিডি, ম্যাগনিফাই এগ্রো লিমিটেড, মিশাম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, ভিএনএফ এগ্রো লিমিটেড, এমকেএ হ্যাচারি, মিশাম ফিড, এজে ট্রেডিং, পিয়াল এন্টারপ্রাইজ, ডায়মন্ড এগ লিমিটেড, মাতব্বর ট্রেডার্স, ইউরো এশিয়া ইন্টারন্যাশনাল, আরিফাস বাংলাদেশ লিমিটেড, জিএস এনিমেল সায়েন্স, আনিকা এগ্রো প্রডাক্টস ও ফ্যালকন এন্টারপ্রাইজ।