পুনরায় ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের দাবি বিনিয়োগকারীদের

সাইফুজ্জামান সুমন: ক্রমাগত বাজার ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। নিয়মিত শেয়ার লেনদেন বিমুখ হচ্ছেন ব্যক্তি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এদিকে থেমে থেমে দরপতনে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টেকহোল্ডাররা একের পর এক আশার বাণী শোনালেও তার কোনো প্রভাব নেই শেয়ারদরে। শেয়ারের দরপতন ঠেকানো ও বাজারের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুনরায় ফ্লোর প্রাইস চালুর দাবি করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার পতনের জন্য তারল্য সংকটকে দায়ী করছেন অনেকেই। এজন্য বাজারে তারল্য বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে একের পর এক উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ ঘোষণা ছিল, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো রোজায় ৩০০ কোটি টাকা আর ২৫০ স্টক ডিলার এক কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করবে। এছাড়া পতন ঠেকাতে বেঁধে দেয়া হলো ২ শতাংশের সার্কিট ব্রেকার। কিন্তু এসবের এখনও কোনো প্রভাব দেখছে না কেউ। প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক শেয়ারের দর কমছে। এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ পর্যন্ত থাকলেও কোনো ক্রেতা দেখা যাচ্ছে না বহু কোম্পানির।

দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ থাকার পরও প্রায় প্রতিদিনই সূচকের পতন, লেনদেন তলানিতে নেমে আসার ঘটনা বিনিয়োগকারীদের হতাশা এখন ক্ষোভে পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় ‘ফ্লোর প্রাইস’-এর পুনর্বহাল সময়োপযোগী পদক্ষেপ হতে পারে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারী ও বাজারসংশিষ্টরা।

এ বিষয়ে এএফসি ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী মো. মাহাবুব এইচ মজুমদার শেয়ার বিজকে বলেন, পতন ঠেকাতে বেঁধে দেয়া আছে ২ শতাংশের সার্কিট ব্রেকার, সেটা ঠিক আছে। পাশাপাশি ক্যাশ ফ্লো কীভাবে বাড়ানো যায়, বিনিয়োগকারীদের কীভাবে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা যায়, সেদিকেও লক্ষ্য দেয়া উচিত।

এর আগে শেয়ারের দামের পতন ঠেকাতে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়। যাতে বেঁধে দেয়া ওই সীমার নিচে কোনো শেয়ার নামতে না পারে। এভাবে করোনা সংক্রমণ শুরুর সময়ে শেয়ারবাজারের ভয়াবহ পতন থামিয়েছিল বিএসইসির তৎকালীন কমিশন। ওই কমিশনে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন এম খায়রুল হোসেন। তবে বাজার ইতিবাচক অবস্থায় ফেরায় গত বছর জুনের শেষ দিকে প্রথমে ৩০ কোম্পানির ও পরে সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হয়।

ফ্লোর প্রাইস আরোপের আগে ১৮ মার্চ দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স নেমেছিল ৩ হাজার ৬০০ পয়েন্টে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে নির্ধারিত সীমার নিচে শেয়ারের দাম না নামায় ২৫ মার্চ ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার পয়েন্টে।

প্রসঙ্গত, ফ্লোর প্রাইস হলো যে কোনো সেবা বা পণ্যের সরকার নির্ধারিত দাম যা ওই পণ্যের ভারসাম্য বা ভারসাম্যতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়; যার নিচে দাম নামতে না পারলেও ওঠার বিস্তর সুযোগ থাকে। বাংলাদেশে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবকালে শেয়ার মার্কেটের ক্রমাগত দরপতন ঠেকাতে সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন এ ফ্লোর প্রাইস ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্ধারিত দামের নিচে কোনো কোম্পানির শেয়ার ট্রেড হওয়া বন্ধ করা হয়।

গত ৩১ মার্চ শেষ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ছয় হাজার ৭৫৭ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট। আর গতকাল এ সূচক দাঁড়ায় ছয় হাজার ৬৬২ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট। যদিও গতকাল সূচক ২১ পয়েন্ট বেড়েছে। আর গতকাল দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে ৬৪৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ১০ দিন আগে অর্থাৎ ৩১ মার্চ ডিএসইতে লেনদেন ছিল এক হাজার ১১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

বাজার ক্রমেই পতনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন মার্জিন ঋণ গ্রহণকারীরা। ঋণ সমন্বয় করতে তারা বাধ্য হয়ে অনেক কম দরে শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে তাদের লোকসানের পাল্লা আরও বেশি ভারী হচ্ছে।

এ ব্যাপারে প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজের সাবেক সিইও মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মন্দার বাজারে মার্জিন লোন নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের ঋণ সমন্বয় করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় তাদের পুঁজি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এখান থেকে পরিত্রাণ পেতে ফ্লোর প্রাইস ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০