মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের লেনদেনে গতি ফিরিছে। আগের চেয়ে এই মার্কেটের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। মূলত পুনর্গঠনের খবরে এই মার্কেটের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে তাদের, যার জের ধরে বছরের ব্যবধানে এখানে লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩১৯ শতাংশ। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ (২১ জুন পর্যন্ত) অর্থবছরে ওটিসি মার্কেটে মোটি এক কোটি ৩৭ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৭৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এ সময় তালিকাভুক্ত ৬৫টি কোম্পানির মধ্যে ৩০টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর আগের অর্থবছরে এই মার্কেটে লেনদেন হয় ১৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট শেয়ার লেনদেন হয় ৪০ লাখ। যেসব শেয়ারের বাজার মূল্য ছিল ১৯ কোটি টাকা।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, এ মার্কেটে লেনদেন প্রক্রিয়া জটিল। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এখানে ক্রেতা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যে জন্য এই মার্কেটের লেনদেনের গতিও কম। তবে বর্তমানে এই মার্কেট পুনর্গঠনের কাজ চলছে। যার জেরে এই মার্কেটের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, কর্তৃপক্ষ এই মার্কেটের উন্নয়নে কাজ করছে। মার্কেটের উন্নয়ন হলে এখানকার লেনদেনও সহজ হবে। ফলে শেয়ারের ক্রেতা-বিক্রেতা খুঁজে পেতে সমস্যা হবে না। বিষয়টি সম্পর্কে সবাই অবগত রয়েছেন। সে কারণে এই মার্কেটের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের উন্নয়নে কাজ চলছে। বাদ পড়ছে অস্তিত্বহীন কোম্পানি। এই মার্কেটের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই এবং যেসব প্রতিষ্ঠান আইন মেনে চলে না, সেসব প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে ওটিসি মার্কেট পুনর্গঠন করা হবে।
সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা পড়েছে। শিগগির এই মার্কেট পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে মার্কেট চাঙা হলেও ওটিসি থেকে অস্তিত্বহীন কোম্পানি বাদ পড়ছে এমন খবরে দুশ্চিন্তায় রয়েছে এই মার্কেটের ৩৪ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা। বর্তমানে ডিএসই’র ওটিসিতে ৬৫টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে। এর মধ্যে মাত্র ৩২টি বিদ্যমান আইন অনুসরণ করে। এই ৩২টিকেই শুধু ওটিসিতে রেখে বাজার পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ ওটিসি থেকে ৩৩ কোম্পানি বাদ পড়ে যাবে, যেগুলোর বড় অংশেরই কোনো অস্তিত্ব নেই।
এর আগে গত মার্চে ওটিসি মার্কেট কার্যকর করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে বিদ্যমান আইনের সংশোধন প্রস্তাব দেয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এরপর কমিশনও ওটিসিকে পুনর্গঠনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। এতে মূল পুঁজিবাজারের মতো ওয়েববেজড ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় লেনদেনের সুযোগ দেওয়া হবে। এই বাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া ও বিধিবিধান তুলনামূলকভাবে সহজ হবে। বাজারকে কার্যকর করতে বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডও এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে কেনাবেচার সুযোগ সৃষ্টি করবে। বর্তমানে এ ধরনের ২৬ ফান্ডের আকার অন্তত ৯ হাজার কোটি টাকা।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই, এমনিতেই এসব শেয়ার নিয়ে ভোগান্তিতে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ এখানে তাদের লাখ লাখ টাকা আটকে রয়েছে। তবে ওটিসিতে থাকার কারণে এখনও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পুঁজি ফিরে পাবেÑএমন প্রত্যাশা করছেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু টাকা ফেরতের কোনো ব্যবস্থা না করে যদি এসব প্রতিষ্ঠানকে ওটিসি থেকে তালিকাচ্যুত করা হয়, তবে সমস্যা আরও জটিল হবে। কারণ তখন প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের অর্থ ফেরত দেওয়ার কোনো দায়ভার থাকবে না। তাই কোম্পানিগুলো ওটিসি থেকে বাদ দেওয়ার আগে এর বিহিত করা উচিত বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেন, ‘ওটিসি থেকে বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্টদের উচিত এসব কোম্পানি অবসায়নের ব্যবস্থা করা। এটা করলে শেয়ারহোল্ডাররা কিছুটাও হলেও উপকৃত হবেন। পক্ষান্তরে এটা না করা হলে শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’