মো. আসাদুজ্জামান নূর: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে সূচক ও লেনদেনের মিশ্র প্রবণতা দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। সপ্তাহজুড়ে বেশিরভাগ শেয়ারের মূল্য বেড়েছে। কিন্তু বড় মূলধনের কিছু কোম্পানির শেয়ারের মূল্য হ্রাসের কারণে সূচক না বেড়ে উল্টো কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে গত সপ্তাহে বাজারে লেনদেনে ছিল ঊর্ধ্বমুখী ধারা। একই সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে সাধারণ বিমা, পেপার ও সিমেন্ট খাতে।
বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য অনুযায়ী, এর আগের সপ্তাহেও পতন হয়েছিল পুঁজিবাজারে। ওই সপ্তাহে তিনটি বিষয় পতন বয়ে এনেছিল। কভিডের সংক্রমণ বৃদ্ধি ও বিভিন্ন কোম্পানির দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশের অপেক্ষা ও বছরের শুরু থেকে দরবৃদ্ধি হতে থাকা শেয়ারের মুনাফা গ্রহণ। ওই তিন ইস্যুতে নেতিবাচক ছিল পুঁজিবাজার।
এদিকে সদ্যসমাপ্ত সপ্তাহে পুঁজিবাজারের এ মিশ্র প্রবণতার পেছনে দুটি কারণ উল্লেখ করছেন বাজারবিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানি দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, অনেক কোম্পানি ভালো আয় ও মুনাফা করেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ওইসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বেড়েছে।
অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। বিশেষ করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার বিধিনিষেধের মেয়াদ ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। তবে মুনাফা গ্রহণের পর পোর্টফোলিও রিব্যালেন্সিং করার কারণে বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে; যা লেনদেনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইতে মোট ছয় হাজার ৪২৮ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ছয় হাজার ১৪৯
কোটি টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ২৭৯ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ সময়ে টাকার অঙ্কে ডিএসইর গড় লেনদেনও বেড়েছে। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে এক হাজার ২৮৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে গড় লেনদেন ছিল এক হাজার ২২৯ কোটি টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে গড় লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে মিয়া আব্দুর রহমান সিকিউরিটিজের এক শীর্ষ কর্মকতা বলেন, জানুয়ারি-ফেব্রয়ারিতে কোম্পানিগুলো প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। ভালো মুনাফা করা কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করতে চাইবেন বিনিয়োগকারীরা। এটাই বাজারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে কভিডের বিধিনিষেধের কারণে এখনও অনেক বিনিয়োগকারী হাত গুটিয়ে বসে আছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিনিয়োগ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
গত সপ্তাহে ডিএসইর খাতভিত্তিক লেনদেনে শীর্ষে ছিল বিবিধ খাত। ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল খাতটির দখলে। ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত। বস্ত্র খাত ১২ শতাংশ নিয়ে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। পরের অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতের দখলে ছিল মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। পঞ্চম স্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। খাতটির লেনদেন ছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া এ তালিকায় পরেই রয়েছে যথাক্রমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক এবং সাধারণ বিমা খাত।
খাতভিত্তিক ইতিবাচক রিটার্নে গত সপ্তাহে সবার শীর্ষে ছিল সাধারণ বিমা খাত। মোট রিটার্নের ২ দশমিক ৫ শতাংশই ছিল এ খাতের দখলে। প্রায় একই পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পেপার খাত। তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিমেন্ট খাতে রিটার্ন এসেছে ২ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া আইটি, টেলিকম, ব্যাংক, ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে গত সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য রিটার্ন এসেছে।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে, ৫ দশমিক ১ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সিরামিক খাত, ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া চামড়া খাতে ৪ দশমিক ২ শতাংশ, ভ্রমণ খাতে ১ দশমিক ৮ শতাংশ ও জীবন বিমা খাতে ১ দশমিক ৭ শতাংশ করে ঋণাত্মক রিটার্ন এসেছে।
গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে ৪ পয়েন্ট। সপ্তাহ শেষে সূচকটি সাত হাজার ২৩ দশমিক ৫২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৭ হাজার ২৭ দশমিক ৫৫ পয়েন্টে। সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বীকন ফার্মা, বেক্সিমকো লিমিটেড, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ফরচুন শুজের শেয়ার।
ডিএসইর অন্য সূচকের মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৮ শতাংশ কমে দুই হাজার ৫৯২ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল দুই হাজার ৬০২ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে। শরিয়াহ্ সূচক ডিএসইএস ৪ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বা দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৫০৪ দশমিক ২৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল এক হাজার ৪৯৯ দশমিক ৯৭ পয়েন্টে।
সূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধনও সামান্য কমেছে। সপ্তাহের শুরুতে এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন ছিল পাঁচ লাখ ৬২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। সপ্তাহ শেষে যা কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৬২ হাজার ১৮২ কোটি টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৭২০ কোটি টাকা বা দশমিক ১৩ শতাংশ।
সপ্তাহে ডিএসইতে ৩৮৮টি সিকিউরিটিজের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৮৪টির, কমেছে ১৬৬টির ও অপরিবর্তিত ছিল ৩৮টির।