প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাসে জর্জরিত বাংলা সংস্কৃতির এক প্রাণকেন্দ্র এই পুরান ঢাকা। ঢাকার পূর্ব-পশ্চিমের গেণ্ডারিয়া ফরিদাবাদ থেকে হাজারীবাগ ট্যানারি মোড় পর্যন্ত এবং দক্ষিণে ঢাকা সদরঘাট থেকে নবাবপুর পর্যন্ত বিস্তৃত এই নগরীটি। পুরান ঢাকার গোড়াপত্তন হয় আনুমানিক ৭০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এবং প্রতিষ্ঠা হয় ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে। ঐতিহ্যবাহী এই নগরীর বিস্তৃত হয় ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের পরে। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য অধিক সাফল্যমণ্ডিত। একসময়ের সুপরিকল্পিত, সুন্দর ও ছিমছাম এই অঞ্চলটি সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে ফেলেছে তার নিজ ঐতিহ্য। যদিও এ নগরীটি তার নিজ সমৃদ্ধি বজায় রাখতে হারিয়ে যাওয়া এই বিবর্তনকে টেনে ধরতে চাইছে কিন্তু সময় বিবেচনায় তা যেন অনেক অনুপযোগী ও অপরিকল্পিত।
পুরান ঢাকা মূলত ব্যবসায়ী এলাকা হিসেবে বেশ পরিচিত। আসলে পরিচিত নয় বরং একটি ব্যবসায়ী এলাকাই এটি। তবুও বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে ও সবার প্রথমে নাম আসে এই পুরান ঢাকার। কিন্তু পুরান ঢাকার সংস্কৃতি যেন আর নেই। এই সংস্কৃতির ঘাড় চেপে বসেছে অনেকটা আধুনিকতা ও সংস্কৃতিবিমুখতা আর অনেকটা অব্যবস্থাপনা। তবে সবকিছু থেকে অব্যবস্থাপনার ভারটিই যেন অনেক বেশি। অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা, যানজট, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ সবকিছু যেন আঁকড়ে ধরে বসে আছে এই পুরান ঢাকাকে।
পুরান ঢাকার অলিগলির একেক দিকে জলাবদ্ধতা, পরিবেশ ও যেন যাচ্ছেতাই। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে গড়ে উঠেছে নানা রকম অস্বাস্থ্যকর জিনিস।
হাজারো মানুষের আনাগোনার এই অঞ্চল এর আরেকটি সমস্যা হলো যানজট। হাজারো মানুষের দৈনন্দিন চলাচলের জন্য নেই কোনো উপযুক্ত ব্যবস্থা। বরং সম্পূর্ণ যাতায়াত ব্যবস্থাই যেন এখানে অপরিকল্পিত। নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহন যেন মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থাকে করে তুলছে কষ্টকর, তৈরি করছে নানা রকম ভোগান্তির। এই নগরীটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য ও এই যানবাহন ব্যবস্থা এক ভীতির কারণ।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে। পুরান ঢাকার এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন আনাগোনা চলে হাজারো শিক্ষার্থীর। এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এর একটু বাইরে নজর দিলেই দেখা মেলে এক অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার বাস্তব উদাহরণ। ওই অবস্থায় পরিবেশটিকে আর যাই মনে হোক না কেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানবান্ধব পরিবেশ মনে হবে না।
ক্যাম্পাসের বাইরে সারাদিনই যানজট আর রাস্তার জায়গা দখল করে দাঁড়ানো একের পর এক বাস। এ যেন কোনো বাসস্ট্যান্ড। ছোট ছোট জায়গা নিয়ে তৈরি করে নিয়েছে নিজস্ব বাস কাউন্টার। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই ভোগান্তির শিকার হন। নেই প্রশাসন কিংবা কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি।
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক যাত্রীর। আর এ ঘটনা যেন আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের ভয়। যানবাহন চালকদের অসর্তকতা, অসচেতনতা কিংবা অনিয়ন্ত্রিত গতি ও বেপরোয়া গাড়ি চালানো এ দুর্ঘটনার মূল কারণ। এত কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা। সংলগ্ন বাহাদুর শাহ পার্ক খাবারের দোকানের দখলে। আর এর সঙ্গে আরও দেখা মেলে ঘরহীন কিছু মানুষের। এই মানুষগুলোর মাঝে আবার দেখা মেলে কিছু পথশিশু, যাদের অধিকাংশই অপরিচ্ছন্ন এক পরিবেশে নিজেদের ভাসিয়ে দিয়েছে মাদকের জগতে ও বিভিন্ন অনৈতিক কাজে।
দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা এই পুরান ঢাকা কেবল অবহেলায় হারিয়ে ফেলছে তার ঐতিহ্য। ঐতিহ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা। আর এর জন্য প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারি অনেক বেশি প্রয়োজন।
সাফা আক্তার নোলক
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়