সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনমিটার, যার বিপরীতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) সরবরাহ করে ২৮০ মিলিয়ন ঘনমিটার। এর মধ্যে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এলএনসি গ্যাসের মাধ্যমে ৯৯ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর বিকল্প হিসাবে রাখা হয়নি দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া গ্যাসের সংযোগ। ফলে মেরামত বা আমদানি জটিলতায় সংকটে পড়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের গ্যাস ব্যবহারকারী।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল সূত্র অনুযায়ী গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের আবাসিক, শিল্প-কলকারখানা, বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনের ছয় লাখ এক হাজার ২৮ গ্রাহকের কাছে দুই হাজার ৮৭৪ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি করে সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাস পাওয়া যায় মাত্র সাত মিলিয়ন ঘনমিটার। আর বাকি দুই হাজার ৮৬৭ মিলিয়ন ঘনমিটার বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাস থেকে সংগ্রহ করা হয়। অথচ ২১-২২ অর্থবছরের মোট সরবরাহকৃত গ্যাসের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে সরবরাহ কমেছে ২২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বর্তমানে চট্টগ্রামে দৈনিক গড়ে ৪৫ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সর্বশেষ কয়েক দিন পাওয়া গেছে ২৮ থেকে ৩০ কোটি ঘনফুট। আর সংস্থাটির সরবরাহ করা গ্যাসের ৯৯ দশমিক ২৯ শতাংশই গৃহস্থালি বা আবাসিক গ্রাহক। এছাড়া শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ বা দুই হাজার ৮৩৭ বাণিজ্যিক গ্রাহক, শিল্প গ্রাহক এক হাজার ১৬০, ক্যাপটিভ পাওয়ার গ্রাহক ২০৫, সিএনজি ফিলিং স্টেশনের গ্রাহক ৭০, বিদ্যুৎ ছয়, সার কারখানার গ্রাহক চার এবং চা বাগান গ্রাহক দুই। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রধান দুই সার কারখানা ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রামের ইস্পাত, সিমেন্টসহ বিভিন্ন ভারী শিল্প-কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
গ্যাস বিতরণ সংস্থারমতে, আমদানি করা এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশনের পর পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের জন্য দেশে ভাসমান টার্মিনাল (ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট বা এফএসআরইউ) আছে দুটি। সংস্কারজনিত কারণে এর একটি থেকে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে নভেম্বর থেকে। অন্যটি কারিগরি ত্রæটির কারণে গত বৃহস্পতিবার অন্যটি থেকেও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে আকস্মিকভাবেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সরবরাহ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহকরা।
কেজিডিসিএলের একজন গ্রাহক মাহবুবুল আলম বলেন, ২০১৮ সালের এলএনসি গ্যাস আমদানির পর থেকে চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ তেমন বাড়েনি। এখন ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের বিপরীত বর্তমানে সরবরাহ হচ্ছে ২৮০ মিলিয়ন ঘনমিটার, যা ২০১৭ সালে ১৭৮ থেকে ১৯০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করতে পারত। অর্থাৎ পরিস্থিতির তেমন উন্নয়ন হয়নি. যা হতাশাজনক।
গ্যাস সংকটের বিষয়ে একাধিক স্টিল ও সিমেন্ট কারখানার উদ্যোক্তারা বলেন, ‘কয়েক মাস ধরেই গ্যাসের সংকট রয়েছে। গত কয়েক দিন গ্যাসের চাপ কম থাকায় আমরা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছি। এভাবে কারখানা চালিয়ে উৎপাদন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে পণ্যমূল্য খরচ বেড়ে যাবে। গত দুদিন গ্যাস না থাকায় আমাদের মতো অন্যান্য গ্যাসনির্ভর ভারী ইস্পাত ও সিমেন্ট কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাসের বিকল্প উৎপাদন পদ্ধতির চিন্তাভাবনা করছে। যদিও গ্যাসনির্ভর কারখানা অন্য জ্বালানিতে রূপান্তর সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।’
এ বিষয়ে জানতে কেজিডিসিএলের এমডি আবু সাকলায়েনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) গৌতম চন্দ্র বলেন, ‘এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের গ্যাস বিতরণ প্রায় শতভাগ বন্ধ রয়েছে। সমস্যাটি সমাধানে দ্রæত সময়ের মধ্যে সরবরাহ নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছে, বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
ক্যাব চট্টগ্রামের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এম নাজের হোসাইন শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি আমদানিনির্ভর গ্যাস হওয়ায় ঝুঁকি বেশি। এছাড়া গ্যাস আমদানিতে বিপুল পরিমাণে ডলার ব্যয় হচ্ছে। আমাদের উচিত ছিল গ্যাসক‚প খননে মনোযোগী হওয়া। আমরা নাগরিক সমাজ সবসময় বলেছি, নতুন গ্যাসক‚প অনুসন্ধানের কথা। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে বাড়ছে ব্যয়। পাশাপাশি জনদুর্ভোগও বেড়েছে।