Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:20 pm

পুলিএশর সিসি ক্যামেরার আওতায় ফরিদপুর শহর

কেএম রুবেল, ফরিদপুর: নাগরিকদের নিরাপত্তা জোরদার এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে ফরিদপুর জেলা পুলিশ। এর অংশ হিসেবে জেলা পুলিশের উদ্যোগে শহরের মোড়ে মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে দুই শতাধিক সিসি ক্যামেরা।

নাগরিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরেও আবাসিক ভবনের বাসিন্দারাও নিজেদের উদ্যোগে ভিডিওর মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থায় (সার্ভিলেন্স সিস্টেম) সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা স্থাপন করেছে।

সম্প্রতি ফরিদপুর জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় জেলা সদরের পৌর এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থানগুলোয় বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় থেকে সিঅ্যান্ডবি ঘাট এবং ভাঙা রাস্তার মোড় থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত এ সিসিটিভির নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে।

ফরিদপুর জেলা পুলিশের এসপি আলিমুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, নাগরিকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর পুলিশিং নজরদারির জন্য ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, শহরের বাণিজ্যিক এলাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা এমনকি শহরের প্রবেশের প্রত্যেকটি সড়কে স্থাপন করা হয়ছে সিসি ক্যামেরা। এর মাধ্যমে সুরক্ষিত হয়েছে নাগরিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

তিনি জানান, শহরজুড়ে দুই শতাধিক সিসি ক্যামেরা দিয়ে পুলিশ নজরদারি করছে সবকিছু। এতে করে শহরের অপরাধ তুলনামূলভাবে কমতে শুরু করেছে। আমরা পুরো সিস্টেম নিয়ন্ত্রণের জন্য দক্ষ টিম তৈরি করেছি। তারা মনিটরিং করছে সব সময়।

শহরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার প্রসঙ্গে ফরিদপুর প্রেস ক্লাবে সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, প্রথমত, একজন নাগরিক হিসেবে এ উদ্যোগ সাধুবাদ জানাই। পুলিশের এ কর্মকাণ্ডের ফলে শহরবাসীর সামজিক নিরাপত্তা বাড়বে। অপরাধীরা তাদের অপরাধ প্রবণতা কমাবে। তবে তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, শুধু স্থাপন করলেই চলবে না, সেটাকে সচল রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেণ গ্রহণ করতে হবে।

শুধু জেলা পুলিশের উদ্যোগই নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগেও বাণিজ্যিক বিপণিবিতান ও আবাসিক ভবনে স্থাপন করা হয়েছে এ প্রযুক্তি। শহরের আলিপুর রওশন খান সড়কে নতুন বাড়ি নির্মাণ করেছেন ব্যাংকার হাদী নান্নু। তার ভবনে স্থাপন করা হয়েছে একাধিক সিসি ক্যামেরা। কেন এ ব্যবস্থা সে বিষয়ে তিনি বলেন, আমার পরিবার ও ভাড়াটিয়াদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

আলিপুরের ওই ব্যাংকারের মতো শহরের ঝিলটুলি, নীলটুলি, খাবাসপুর, টেপাখোসহ সব মহল্লায় এমন ব্যবস্থা করেছেন আবাসিক ভবন মালিকেরা।

ফরিদপুরে সরকারি চাকরি করেন কামরুল হাসান। তার দক্ষিণ ঝিলটুলির বাড়িতে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। তিনি বলছেন, বিভিন্ন সময়ে যেসব সহিংসতা ও চুরির ঘটনা ঘটেছে, সেসব দেখে আমরা মনে করছি, আমাদের ভবনের নিরাপত্তার জন্য কয়েকটি সিসি ক্যামেরা বসানো দরকার। তাহলে কেউ যদি এরকম কিছু করে, তাহলে আমরা তাদের শনাক্ত করতে পারব। এছাড়া হয়তো সিসি ক্যামেরার ভয়ে দুষ্কৃতকারীরা কোনো অপরাধ করার আগে দুবার চিন্তা করবে।

এছাড়া জেলা প্রশাসন, আদালত চত্বরসহ জেলা সদরের সব সরকারি দপ্তর সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।

এ-জাতীয় সরঞ্জাম বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গত পাঁচ মাসে এ-জাতীয় পণ্যের বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে।

আলিপুর রেড ক্রিসেন্ট মার্কেটের স্মার্ট ভিউয়ের মালিক মোহাম্মদ গোলাম রাব্বি রনি বলছেন, আগের তুলনায় ইদানীং আমাদের বিক্রি বেড়েছে। মানুষজন নিরাপত্তার বিষয়ে বেশ সচেতন হয়ে উঠেছে। আবার এ-জাতীয় সরঞ্জামের দামও এখন অনেক কম। তাই অনেকেই নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা কিনছেন।

তিনি জানান, বাণিজ্যিক ভবন বা অফিসের বাইরেও বিভিন্ন আবাসিক ভবনের জন্য অনেক ক্যামেরা বিক্রি হচ্ছে। জেলা শহরের বাইরে থেকেও ক্রেতারা আসছেন। এসব ক্যামেরায় টানা তিন মাস পর্যন্ত ভিডিও সংরক্ষণ করা যায়। চাহিদা অনুযায়ী দাম ওঠানামা করলেও তা খুব বেশি নয় বলে জানান তিনি।

সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি শিপ্রা গোস্বামী বলেন, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে সম্প্রতি মোটরসাইকেল চোরচক্র ও কয়েকজন ছিনতাইকারীকে পুলিশ আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে।